![]() |
রোহিঙ্গাদের ফেরানো বাংলাদেশ সরকারের ওপরও নির্ভর করে : সু চি |
অনলাইন ডেস্কঃ
অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সেনা
দমন-পীড়ন অভিযানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এ সমস্যা সমাধানে ‘আগ্রহ’
দেখিয়েছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।
তিনি
যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নিতে সম্মতি
জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারেরও ওপরও নির্ভর করে বলে দাবি সু
চির।
গত ২১ সেপ্টেম্বর নিকি এশিয়ান রিভিউ-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান সু চি।
জাতির
উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এবং জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের ভাইস
প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের একদিন পর নিজের বিরুদ্ধে জমে ওঠা সমালোচনার মুখে এ
সাক্ষাৎকার দিলেন সু চি।
সু
চি বলেছেন, কিছু পরিমাণ শরণার্থীদের ফেরত নেবে তার দেশ। তবে যাচাই-বাছাই
শেষে তাদের ফেরত নেয়া হবে। এটা যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। তবে সেনা
অভিযানের মুখে ৪ লাখ ১০ হাজারের রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আসার বিষয়ে আরও
খোঁজ নেয়ার কথাও জানান তিনি।
সু
চি বলেন, আমার দ্রুত এটা (ফেরত নেয়া) শুরু করতে পারি। তবে তার মানে এই নয়
যে এটা দ্রুত সম্পূর্ণ শেষ হবে। এটা যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। কারণ এখানে
নতুন কিছু নেই। এটা কখন শুরু হবে তা নির্ভর করে বাংলাদেশ সরকার আমাদের
সঙ্গে থাকার ওপর। কেননা বাংলাদেশ না চাইলে আমরা তাদের দেশে এ নিয়ে কিছু
শুরু করতে পারি না।
তিনি
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই
পক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশে এতে রাজি আছে বলেও দাবি করেন।
দেশটির
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সু চি রাখাইনে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে
উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নতিকে
প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার রাখাইনে আর্থিক সংস্কারে পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিশেষ
করে কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নে। সেখানে দারিদ্র কমাতে এসব (অভিযান) প্রয়োজন
ছিল, যার কারণে চরমপন্থার সৃষ্টি হয়।
রাখাইনে
সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের ২০০ বসতিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট বিষয়ে এবং
অভিযানের মুখে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার বিষয়ে সমালোচনার জবাব দেন
তিনি।
গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনের বিভিন্ন চৌকিতে হামলা করে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এতে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও ৮০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী মারা যায়।
সু
চির সাবেক সমর্থক হিসেবে পরিচিত জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতারা তার বিরুদ্ধে
জাতিগত নির্মূলে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তুলেছে। রাখাইনে সেনা দমন-পীড়ন বন্ধে
সু চি ইচ্ছুক নন বলেও তাদের অভিযোগ।
তবে
এসব সমালোচনা অগ্রাহ্য করে সু চি বলেন, কোনো কিছুই অবাক হওয়ার নয়। কারণ,
মতামত পরিবর্তন হয়। অন্য সব মতামতের মতো বিশ্ব মতও বদলায়।
তিনি বলেন, যেসব দেশ রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গেছে তারা, যেসব দেশ এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়নি তাদের চেয়ে এ বিষয়ে ভালোভাবে বুঝবে।
তিনি
বলেন, আমাদের বিরোধী দল রয়েছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে থাকে। এর
মানে হলো আমাদের এখানে সমালোচনা এবং বিতর্কের উন্মুক্ত সু্যোগ রয়েছে।
গত
১৯ সেপ্টেম্বরের ভাষণে সু চি দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে
আর কোনো অভিযান চালায়নি সেনাবাহিনী। তারপরও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশ আসছে। এ বিষয়ে জানাতে চাইলে বলেন, কেন বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা
বাংলাদেশ ঢুকছে এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজছে সরকার।
তিনি
বলেন, এ নিয়ে আমরা যদি আইন অনুযায়ী কাজ করতে যাই, তবে সঠিক প্রমাণ,
গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দরকার। শুধু শোনা কথায় হবে না। কোর্টে গ্রহণযোগ্য এমন
প্রমাণ দরকার। রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতিতে স্থানীয় অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর হামলা
ও লুটপাট সম্পর্কে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে নতুন করে অনুসন্ধানের কথা বলেন
তিনি।
কফি
আনান কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা ভারসাম্যপূর্ণ
একটি রিপোর্ট। তবে এতে কিছু বিষয় ঠিক নেই। এটা আমরা কমিশনকে জানিয়েছি এবং
তারা সেগুলো সংশোধনে সম্মত হয়েছে।
মিয়ানমারের
পরারাষ্ট্রনীতি ও চীনের সঙ্গে সুস্পর্ক বিষয়ে সু চি বলেন, সব দেশের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গড়াই আমাদের নীতি। মিয়ানমার মানে শুধু রাখাইন নয়।