কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ

 


মাহফুজ শাকিল: কুলাউড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা, মিটার সংযোগে ঘুষ চাওয়া ও গ্রাহককে মামলা করার ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়ার সাব জোনাল অফিসের এজিএম এম নাজমুল হক তারেক ও বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হুয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আজিজুল হায়দার।

এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলী আদালতে এজিএম নাজমুল হক তারেক ও ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সি.আর মামলা নং- ৪২৮/২০২২ ইং (কুলা) দায়ের করা হয় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবরে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য লুৎফুর রহমান। যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।

৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে কুলাউড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজিজুল হায়দার বলেন, তিনি কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন গ্রাহক। তাদের বাড়ি থেকে পল্লী বিদ্যুতের মেইল লাইনের দূরত্ব প্রায় ৩০০ ফুট দূরে। গত দুই বছর পূর্বে বরমচাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে খুঁটির জন্য আবেদন করি। আবেদন করার পর পল্লী বিদ্যুৎ এর অফিসের এক লাইনম্যান আমাকে জানায় খুঁটি বসাতে হলে তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি লাইনম্যানকে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। কিছুদিন পর এই লাইনম্যান অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যায়। প্রায় ৪ মাস পূর্বে কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীন আমার বাড়িতে এসে বলেন, ১০ হাজার টাকা দিলে সে বিদ্যুৎ এর খুঁটি বসিয়ে দিবে। পরে আমি ও আমার ভাই ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীনকে ৫ হাজার টাকা প্রদান করি। বাকি টাকা খুঁটি বসানোর পর দেওয়ার কথা ছিল। জয়নাল আবেদীন পরবর্তীতে খুঁটি না বসিয়ে বাকি ৫ হাজার টাকা দেয়ার জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকে। আমরা তাকে বলেছিলাম ৫ হাজার টাকা না দিয়ে বিষয়টি আমরা কুলাউড়া অফিসে জানাবো। তখন সে আমাদেরকে বিদ্যুৎ লাইন থেকে মিটার কাটার হুমকি দেয়। জুলাই-আগস্টের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বিলম্ব ফিসহ ১৪২৯/- টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও পল্লী বিদ্যুৎ বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের জয়নাল আবেদীন তাঁর লোকজনদের নিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ লাইন গত ২৮ আগস্ট বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঘটনার দিন জয়নাল আবেদীনসহ তার লোকজন আমার বসত ঘরে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ বিল কেন পরিশোধ করা হয়নি জিজ্ঞেস করলে আমার মাতা মাহমুদা খানম জয়নাল আবেদীনকে বলেন, আমার ছেলে বাজারে গিয়েছে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য। তখন কথা না শুনে জয়নাল আবেদীন রাগান্বিত হয়ে বিদ্যুৎ লাইন কাটতে গেলে আমার মাতা এতে বাধা দেন। এসময় জয়নাল আবেদীন আমার মাতাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জয়নাল আবেদীন তার হাতে থাকা প্লাস দিয়ে আমার মাতার কনিষ্ট আঙ্গুলে আঘাত করে জখম করেন। এছাড়া জয়নাল আবেদীন আমার বড়ভাই লুৎফুর রহমানকেও কিলঘুষি মেরে আহত করে। পরে আমার মাতা ও বড় ভাই লুৎফুর রহমান কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আমার মাতা একজন ডায়বেটিস, হার্ট ও পেসারের রোগী। এদিকে বিল পরিশোধ করলেও এই জেরে ১২ দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন না করায় আমার অসুস্থ মাতা মাহমুদা খানম অতি গরমে কষ্টের মধ্যে আছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় আমার মায়ের পায়ের হাঁড় ক্ষয় ও কোমরের হাঁড় ক্ষয়ের জন্য থেরাপি এবং শ্বাস কষ্টের জন্য নেবুলাইজার (গ্যাস) দিতে পারছিনা। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে একজন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও কোন আইনের বলে গত ১২ দিন ধরে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে সেটা আমরা জানতে চাই। আমরা দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জানাচ্ছি।

আজিজুল হায়দার আরো বলেন, তিনি পরিশোধকৃত বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এসে এজিএম এম নাজমুল হক তারেককে দেখান। তখন নাজমুল হক তারেক বিচ্ছিন্নকৃত বিদ্যুৎ লাইন পুনরায় সংযোগ করে দেবেন বলে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এসময় ঘুষের টাকা না দেয়ার অপারগতা প্রকাশ করলে নাজমুল হক তারেক আমার মিটারের লাইন সংযোগ করে দিবেন না বলে হুয়রানী ও মামলার হুমকি প্রদান করেন। সংবাদ সম্মেলনে আজিজুল হায়দারের মাতা মাহমুদা খানম ও বড়ভাই লুৎফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। বকেয়া বিল থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং আমাকে মারধর করা হয়েছে। ১২ ধরে গ্রাহককে কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেবা থেকে বঞ্চিত করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন।

কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম এম নাজমুল হক তারেক বলেন, ওই গ্রাহকের ভাই আমাদের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। আমাদের কর্মকর্তাকে মারধর করার কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিব না।

শ্রীমঙ্গল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post