প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর



অনলাইন ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার রাতে তাকে পদত্যাগের এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। কাদের জানান, আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যঃ

সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল টকশোতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। এর জেরে কয়েকদিন ধরে অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী। নারী অধিকারকর্মীদের পাশাপাশি সরকারদলীয় প্রভাবশালী অনেক নেতাও বলছেন, প্রতিমন্ত্রী মুরাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

তারেককন্যাকে নিয়ে বিতর্কিত ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন মহলে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের পদত্যাগের দাবি ওঠে। বিএনপিসহ নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন তার পদত্যাগের দাবি করে বিবৃতি দেয়। এমনকি ক্ষমতাসীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেত্রীরাও মুরাদের পদত্যাগের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা ব্যক্তির মুখের ভাষা শুনে মনে হচ্ছে, আমরা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছি। একই হলের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশিতা ইকবাল বলেন, প্রতিমন্ত্রী এভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই এবং তার পদত্যাগ দাবি করি।

তারেককন্যাকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাহার করবেন না বলে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে জানান প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। তিনি বলেন, মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে কোনো চাপও নেই। 

ডা. মুরাদের মন্তব্যের বিষয়ে এর আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য নয়। এ ধরনের বক্তব্য কেন তিনি দিলেন, অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।

এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন।

রোববার দিবাগত রাত থেকে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের নামে কল রেকর্ডের একটি অডিও ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা পোস্ট।  

৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের অডিওতে একজন নারীর নামও এসেছে। শোনা যাচ্ছে, ওই নারী ঢাকাই সিনেমার একজন নায়িকা। তবে অডিওতে থাকা নারীকণ্ঠ ওই নায়িকার কি না, সে সম্পর্কেও ঢাকা পোস্ট নিশ্চিত হতে পারেনি। 

অডিওতে ওই পুরুষকে (যাকে মুরাদ হাসান বলা হচ্ছে) অশ্লীল নানা কথা বলতে শোনা যায়। এ কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

আসেননি সচিবালয়ে, দিনভর ধরেননি ফোন

বিতর্কিত মন্তব্যের পর সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই যখন ঢাকাই সিনেমার নায়িকার সঙ্গে কথোপকথনের কল রেকর্ড ফাঁস হয় তখন থেকেই গা ঢাকা দেন মুরাদ হাসান। সোমবার আসেননি সচিবালয়ে। ঘোষিত প্রোগ্রামেও যোগ দেননি। 

বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও আসেননি প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। 

ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি ডা. মুরাদ। পদত্যাগের নির্দেশের পর সর্বশেষ রাত ১০টায় তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিমন্ত্রী বাসায় আছেন। তবে ফোন না ধরার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।  

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে মন্তব্যে বিতর্ক 

বেশ কদিন আগে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকা নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন ডা. মুরাদ। পরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি এমন কোনো কথা বলিনি যা আমার প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিপক্ষে যায়

তিনি বলেন, আমি বলেছি, বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। আমাদের কোনো রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। এটাই বলেছি আমি। আমি বলেছি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে হাত দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও এরশাদ।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম লিখেছিলেন। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম সংবিধানে থাকতে পারে না। এরশাদ যুক্ত করেছিলেন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম বলতে কিছু নাই। ধর্ম যার যার যার। এ নিয়ে উগ্র হওয়ার, ধর্মান্ধ হওয়ার কিছু নেই।

মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এ রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। - ঢাকা পোষ্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post