হারানোর পথে ৩শ’ বছরের পুরনো ভৈরব মজুমদার জমিদার বাড়ি



নিউজ ডেস্কঃ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার ৩শ’ বছরের পুরনো ভৈরব মজুমদারের জমিদার বাড়ি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৭৪৮ সালে বরদৈন মুন্সী বাড়িতে তৎকালীণ জমিদার ভৈরব মজুমদার দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি নির্মাণ করেন। সংরক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে এটি। 

তিন তলা জমিদার বাড়িটি এতটাই জরাজীর্ণ যে সেটি এখন ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে দোতলায় পরিণত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে দরজা জানালা। বাড়ির ভেতরে রয়েছে বড় বড় কক্ষ। সংরক্ষণের অভাবে ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ছে কক্ষের ভেতরে। ভেতরে উঁকি দিলে দেখা যায় মাটির নিচে একটি কক্ষ রয়েছে। যারা ঠিক সময়ে খাজনা আদায় করতে পারত না তাদেরকে এখানে আটকে রাখা হতো। 

মূল জমিদার বাড়ির দু’তলায় রয়েছে একটি জলসা ঘর। সেখানে নাচ-গান হতো। দেয়ালগুলো এখনো সেই স্মৃতি বহন করে চলছে। প্রতিটি দেয়ালে ছোট ছোট খোপ আছে। ধারণা করা হয়- এসবে শরাব রাখা হতো। জলসা ঘরের নকসা বেশ আকর্ষণীয়। দেয়ালে এখনো কারুকাজ স্পষ্ট। তিন তলায় একটি সিংহের মূর্তি ছিল। তিন তলা ভেঙ্গে যাওয়া এখন আর মূর্তিটি নেই। 

বাড়িটি ইংরেজি ইউ আকৃতির। তবে একটি বাড়ির ছাদ থেকে আরেকটি ছাদে যেতে পুলের মত পথ তৈরি করা হয়েছে। কক্ষগুলোতে জমিদারি আমলের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে- বড় মটকা, আটা তৈরি করার যাঁতা, খাট- চেয়ার, পাথরের উপর রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য, বেশ কিছু মূল্যবান পাথরসহ আরো কিছু তৈজসপত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভৈরব মজুমদারের পূর্বপুরুষরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে ১৬০০ সালে এ দেশে আসেন। মোগল সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর উত্তর প্রদেশের একটি ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন ভৈরব মজুমদারের পিতা রঘু নারায়ণ মজুমদার। পরে এই অঞ্চলে তিনি একটি বিশাল মৌজার মালিক হয়ে যান। তারই পু্ত্র ছিলেন ভৈরব মজুমদার। 

সময়ের কালক্রমে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি হয়। ১৯৪৭ সালের পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে পাকিস্তান শাসনামলে জৌলুস কমতে থাকে এই বাড়ির। ভৈরব মজুমদারের চতুর্থ প্রজন্ম অনাথ বন্ধু মজুমদার কুমিল্লা শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। বর্তমানে অনাথ বন্ধু মজুমদারের এক পুত্র শক্তি ভূষণ মজুমদার বসবাস করেন নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়ায়। তার একমাত্র পুত্র ভাস্কর মজুমদার প্রতি বছর পূর্বপুরুষদের স্মৃতিধন্য বরদৈন মুন্সী বাড়িতে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসেন।

ভৈরব মজুমদারের ষষ্ঠ বংশধর ভাস্কর মজুমদার বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমাদের বংশধররা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেখাপড়ার জন্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাড়িটিতে লোকজন বসবাস করেনা। বর্তমান প্রজন্ম জানেনা ভৈরব মজুমদারের ইতিহাস সম্পর্কে।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গিয়ে বাড়িটির বর্তমান অবস্থা দেখব। সরকারিভাবে বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় কিনা- সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’

ইতিহাসের পুঁথি কাব্যে ভৈরব মজুমদারকে নিয়ে লেখা না হলেও লোকমুখে পালা গানে তিনি বেঁচে আছেন এখনো। স্থানীয়দের দাবি, ঘোড়া, হাতি, আস্তাবল, জলসাঘর সমৃদ্ধ জমিদার বাড়িটি যেন সংরক্ষণ করা হয় ইতিহাস রক্ষার স্বার্থে। যেগুলো সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। 

Post a Comment

Previous Post Next Post