কুলাউড়ায় বোরো ধানে অধিক ফলনের স্বপ্নে কৃষকদের মুখে হাসি



বিশেষ প্রতিনিধিঃ চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। এ এলাকার কয়েক সহস্রাধিক কৃষক ইতোমধ্যে অনেকেই ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। 

বোরো ক্ষেতে পর্যাপ্ত ধানের কাঁচা শীষ দেখে অধিক ফলনের স্বপ্নে কৃষকদের মুখে হাসি দেখা গেলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিটশকে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এমন দুর্যোগে শেষতক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এই শংকার দোলাচলে রয়েছেন কুলাউড়ার কৃষকরা।



উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুলাউড়া উপজেলার ৭ হাজার ৯’শ ১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। গড়ে প্রতি হেক্টরে ৪ মেট্রিক টন করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১হাজার ৬’শ ৪৮ মেট্রিক টন।

গত মৌসুমে ৬ হাজার ৯’শ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়। ফলন হয়েছিলো ২৬  হাজার ৭’শ ৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৯’শ ৯২ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এ বছরে নতুন করে ৯৮০ হেক্টর জমিতে অধিক ফলনশীল ময়না, টিয়া, রূপালী এসএল-৮ এইচ, হীরা ৫৮ উপসী জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। 

এ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ২৮ ও ২৯ এবং গাজী জাতের বোরো চাষ করা হয়েছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশীমইল, জয়চণ্ডী, বরমচাল ও ভাটেরা ই্উনিয়নের বিস্তীর্ণ জমিতে বাতাসে সবুজ ধানে ছেয়ে গেছে। নিজের আবাদ করা ক্ষেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত এবং ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। আবার কেউ ইতোমধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটার শ্রমিকরা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যবহৃত মেশিন এনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

হাওরে ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত কৃষক রাজা মিয়া, মসুদ আলী বলেন, এ বছর তিনি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে ২৮,২৯ ও গাজী জাতের বোরো আবাদ করেছেন। এছাড়া ৫৮ উপসী ধান এক বিঘা আবাদ করেছেন। ২৮,২৯ ও গাজী ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ৫৮ উপসী ধানের ফলন ভালো হয়নি। কিছু জমির ধান পেকে যাওয়ায় ধান তুলতে শুরু করেছেন। 

বোরো আবাদ করা কৃষক আব্দুল জব্বার, রসুল মিয়া, মোয়াজেদ আলীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, তারা এ বছর প্রায় নিজের ও অন্যের জমিতে ২৮,২৯ ও গাজী জাতের প্রায় দেড়শ বিঘা বোরো চাষ করেছেন। গাছের ধানের শীষে দুধভরা। এক সপ্তাহের মধ্যে ধান ক্ষেত থেকে কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। এবার ফলন হবে বলে আশাবাদি তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন জানান, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুনেছি হিটশক ও শিলাবৃষ্টিতে কৃষকদের বোরো ক্ষেতে অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এখানে এখনো কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষেতের ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলে কেটে ঘরে তোলার ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও বাম্পার ফলন হবে। ’

Post a Comment

Previous Post Next Post