অনলাইন
ডেস্কঃ বিয়ের একদিন পরে প্রতারককে আটক করে ৬ লাখ টাকা জরিমানায় ঘটনায়
জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মিম আক্তার নামে
১৭ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে ৬৩ বছরের এক বৃদ্ধের বাল্য বিয়ে নিয়ে তোলপাড়
সৃষ্টি হয়েছে।
৬৩ বছরের ওই বরের নাম আবদুল্লাহ আল নাসের। তিনি হজ
ওমরাহ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক। বিয়েতে দেনমোহর
ধার্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হলে
বর আবু আল নাসেরকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
ফারুকুজ্জামান ফারুক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক
সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে বরকে ছেড়ে
দেয়া হয়।
এ ঘটনায় সাংবাদিকরা মেয়েটির বাড়িতে ঘটনার বিষয় জানতে গেলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মেয়েটিকে লুকিয়ে রাখে।
এলাকাবাসী
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলার মিরপুর উত্তর পাইকপাড়ার মৃত সামসুল হকের
ছেলে এবং আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আবদুল্লাহ আল নাসের। হজে লোক
পাঠানোর সুবাদে নাসেরের সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের
বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের।
৬৩ বছরের বৃদ্ধ আল নাসের বিয়ে করার জন্য
আতিককে মেয়ে খুঁজতে বলেন। আতিক নাসেরের মন যোগাতে এক ঘটকের মাধ্যমে নিতাই
ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আবদুল মতিনের নাতনি ১৭ বছরের মিম আক্তারকে বিয়ে
করার জন্য প্রস্তাব দেন।
মেয়েটির নানা গরীব হওয়ার কারণে গত ২৭
অক্টোবর নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে
মেয়েটির বিয়ে দেন। ২৮ অক্টোবর ওই বৃদ্ধ প্রাইভেটকারে মেয়েটিকে নিয়ে নানা
শ্বশুর আবদুল মতিনের বাড়ি খোলাহাটি গ্রামে আসলে কৌতূহলী লোকজন বৃদ্ধকে
প্রাইভেট কারসহ আটকে রাখে।
পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
ফারুকুজ্জামান ফারুক, একই গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সুরুজ
মিয়া, একই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনা মিয়া, আবুল কালাম কালটু মিয়াসহ
বেশকিছু প্রভাশশালী ব্যক্তি ছাত্রলীগ নেতা সুরুজের বাড়িতে বৃদ্ধ আবু
নাসেরকে আটকে রেখে রাতভর সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ করার অজুহাতে
নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের নামে স্ট্যান্ডার্ড
ব্যাংক লিমিটেড নীলফামারী শাখার অনুকূলে ছয় লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে
বৃদ্ধকে ছেড়ে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিম আক্তার নিতাই ইউনিয়নের
পাগলাটারী ফুলবাড়ি গ্রামের মহুবার মিয়া এবং লুনা বেগম দম্পত্তির কন্যা।
মেয়েটির বাবা মা ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করার সুবাদে খোলাহাটি
গ্রামে নানা আবদুল মতিনের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করত। মেয়েটি কিশোরগঞ্জ
বিজনেস মেনেজমেন্ট ইন্সটিটিউট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জন্মনিবন্ধন সনদ
অনুযায়ী মেয়েটির জন্ম তারিখ ২২-১১-২০০৩ সাল।
এ বিষয়ে আল নাসের
এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, আমি ইসলামী শরিয়াহ
মোতাবেক ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছি বলে বিয়ের কাবিননামা দেখান।
এদিকে কাবিননামায় বর কনে ও অন্যান্য সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকলেও নিকাহ রেজিস্টারের নাম ও স্বাক্ষর নেই।
নিতাই
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন,
আবদুল্লাহ আল নাসের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সম্মানী মানুষ। তিনি মাত্র
এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে মেয়েটিকে বিয়ে করেছেন। দেনমোহর কম
হওয়ার কারণে তার কাছে দেনমোহর বাবদ ছয় লাখ টাকার চেক গ্রহণ করা হয়েছে।
টাকা এখনও আমার কাছে গচ্ছিত আছে।
কিশোরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল আউয়াল
বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নিতাই ইউনিয়নের
চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বিষয়টি সমাধান করে দিতে চাওয়ায় সেখান থেকে
পুলিশ চলে আসে। সুত্রঃ যুগান্তর