কৃষকের কন্যা জয় করলেন সিলিকন ভ্যালি


অনলাইন ডেস্কঃ টুইটারের সিইও জ্যাক ডোরসের আরেকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘স্কয়ার’। তিনি টুইটারের সিইও থেকে পদচ্যুত হওয়ার পর ২০০৯ সালে মোবাইল পেমেন্ট কম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সিলিকন ভ্যালির অনত্যম এ সফল কম্পানি বর্তমানে ১৯ বিলিয়ন ডলারের। যার নেতৃত্বে কম্পানিটি এগিয়ে চলেছে তিনি ডরসে নন বরং তাঁর ডানহাতখ্যাত সারাহ ফ্রিয়ার। সিলিকন ভ্যালির অন্যতম শীর্ষ এ নারী প্রযুক্তিবিদ বর্তমানে স্কয়ারের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের একটি কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া সারাহর বেড়ে ওঠাও সেখানে। পরিবারের তিনিই প্রথম যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি অঙ্ক ও বিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলাম, এগুলোই ছিল আমার নিত্যদিনের খেলাধুলা এবং পড়ালেখা। তবে ইউনিভার্সিটিতে এসেও আমার শিশুসুলভ আচরণ যায়নি। মন যা চায় তাই করতাম। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি তখনই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ইন্টার্নশিপ শুরু করি। আমি বুঝতে পারি বড় ব্যক্তিদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি আমার মতো খেয়ালিপনা করছেন। ফলে আমি কিভাবে সফল হব? তা ছাড়া এটি একটি পুরুষশাসিত সমাজ। যেখানে আমি কোনো নারী রোলমডেল পাইনি, যাঁকে অনুসরণ করতে পারি।’

এরই মাঝে সারাহ ফ্রিয়ার লন্ডনে ম্যাককিনসেতে যোগ দেন একজন বাণিজ্য বিশ্লেষক হিসেবে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তাঁকে জোহানেসবার্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় কম্পানির ওই অফিসটি সবে কার্যক্রম শুরু করেছে মাত্র। তিনি বলেন, এমন একটি অফিসে আমাকে পাঠানো হলো যেটি শুরু হয়েছে মাত্র। এমনকি এমন দেশে গেলাম যেটি বর্ণবৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে মাত্র। ১৯৯৫ সালে অনভিজ্ঞ আমার জন্য এ পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো কঠিন ছিল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে সেখান থেকে অনেক কিছু শিখলাম।

এরপর চাকরি ছেড়ে ১৯৯৮ সালে এমবিএ করার জন্য আমেরিকায় স্ট্যানফোর্ডে আসি। মূলত তখনই দারুণ সম্ভাবনাময় সিলিকন ভ্যালিকে আবিষ্কার করি। যেখানে আমি নিজের পছন্দমতো কাজ খুঁজে পাই, এরপর আর পেছনে ফিরে যাইনি। সেখানে গোল্ডম্যান স্যাকসে এক দশক কাটাই। তারপর ব্যাংকিং থেকে ইকুইটিজ এবং সিকিউরিটিজ সফটওয়্যারে কাজ করি। প্রতি দুই বছরে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ পেয়েছি। বাধার পাহাড় পেয়েছি, যা অতিক্রম করতে হয়েছে। মূলত নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারই আমাকে সেখানে আটকে রেখেছে। আমি সাফল্য দেখেছি, ব্যর্থতাও দেখেছি। ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটও দেখেছি।

আমি এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চেয়েছি যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে। সেই লক্ষ্যেই ২০১২ সালে স্কয়ারে যোগ দিই, তখন কম্পানিতে কর্মী ছিল মাত্র ২০০। স্কয়ারের মূল কাজ হচ্ছে একটি কার্ড রিডার অ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে কৃষকদের সহায়তা করা। আমি অনুভব করলাম এ কম্পানিতে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারব। তবে আমার বস ডরসের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি সব সময় বলতেন, ইন্টারেস্টিং হও এবং ইন্টারেস্টেড হও। প্রথম যখন আমি তাঁর সামনে চাকরির সাক্ষাৎকারে বসলাম। তিনি বললেন, তোমার নিজের সম্পর্কে আমাকে বল। আমি আমার আগের চাকরিগুলো এবং তার অভিজ্ঞতা বলতে লাগলাম। তিনি আসলে জানতে চেয়েছেন আমি কিভাবে নতুন কিছু শিখেছি। স্কয়ারের সিএফও হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ফ্রিয়ার ওয়ালমার্ট, স্ল্যাক এবং নিউ রেলিক কম্পানির বোর্ডে রয়েছেন। তিনি স্কুল শিশুদের সহায়তাকারী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন।  ম্যানেজমেন্ট টুডে।

Post a Comment

Previous Post Next Post