অনলাইন ডেস্কঃ
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের
পাহাড়ি এলাকায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম আটকা পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার,
পানি, ওষুধ সংকটের কারণে তাদের প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে
মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন।
দেশটির
সরকার বাধা দেয়ায় রক্তাক্ত সামরিক অভিযানের কেন্দ্রস্থলে হাজার হাজার
বেসামরিক মানুষকে খাবার, পানি ও ওষুধের প্রয়োজনীয় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না
বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সহযোগী সংস্থা। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য
গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলছে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘের সব সহযোগী
দাতা সংস্থার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে মিয়ানমার।
এদিকে
সেনাবাহিনীর অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৯০ হাজার
রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে। গত ১০ দিনে রাখাইনে মিয়ানমার
সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে এই রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছেন বলে জাতিসংঘের
শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।
ইউএনএইচসিআর’র
আঞ্চলিক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান আল-জাজিরাকে বলেন, ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর
পর রাখাইন থেকে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধ বাংলাদেশে প্রবেশ
করেছে।
তিনি
বলেন, আমরা অনেক গর্ভবতী নারী, সদ্যজাত শিশু ও বৃদ্ধদের বাংলাদেশ
সীমান্তের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দিকে ছুটতে দেখেছি। দুর্ভাগ্যজনক
হলো, আমরা তাদের অনেকের কাছ থেকে শুনেছি যে তারা না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।
মার্কিন
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের
পাহাড়ি এলাকায় আরও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা
বলছেন, পাহাড়ে আটকা এই রোহিঙ্গারা কোনো ধরনের খাবার, পানীয় এমনকি ওষুধ
পাচ্ছেন না। তাদের প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বৌদ্ধ
অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে
নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হিসেবে বলা হয়। বার্মা নামেও পরিচিত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের
বাংলাদেশি হিসেবে মনে করে। তবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের এই দাবিকে অস্বীকার
করে অাসছে।
গত
২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি
চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে সেখানে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযান শুরু
করে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে অন্তত চার শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিমের
প্রাণহানি ঘটে। সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে রাখাইনে ত্রাণসহায়তা স্থগিত
রেখেছে জাতিসংঘ।
এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে দ্বিতীয় বারের মতো দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করছে।
গত
বছরের অক্টোবরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা
বিদ্রোহীদের হামলার জেরে একই ধরনের কঠোর অভিযান পরিচালনা করে দেশটির
সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে গত বছরের অভিযানে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা
বাংলাদেশে পালিয়েছে।