নিউজ ডেস্কঃ
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাসহ দেড়শতাধিক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাইমারী স্তরে শনিবার ঈদের
ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু হাওর পাড়ের বড়লেখা, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার একশ
প্রাইমারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় এসব স্কুলে তালা খুলাই
সম্ভব হয়নি। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঘোষিত ছুটি চলছে।
৩
জুলাই সোমবার খুলছে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। বন্যায় তলিয়ে থাকায়
প্রায় অর্ধশত মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পাঠদান সম্ভব হবে না।
বন্যার অবনতি ঘটায় আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় আসন্ন অর্ধ বার্ষিক ও প্রাক
নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
কুলাউড়া
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিতে
উপজেলার ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এরমধ্যে ভুকশিমইল
ইউনিয়নে ১৩টি, কাদিপুর ইউনিয়নে ৬টি, জয়চন্ডী ইউনিয়নে ৬টি, রাউৎগাঁও ইউনিয়নে
৩টি, ভাটেরা ইউনিয়নে ৩টি, শরীফপুর ইউনিয়নে ৩টি, টিলাগাঁও ইউনিয়নে ২টি,
কুলাউড়া পৌরসভায় ২টি এবং হাজীপুর, বরমচাল ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে একটি করে
প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, বন্যার কারণে
পৌরসভায় এলাকায় ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, ছকাপন স্কুল এন্ড
কলেজ, ভুকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজ, নবীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু আদর্শ
উচ্চ বিদ্যালয়, সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়
বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে ভুকশিমইল আলিম মাদরাসা, গৌড়করণ দাখিল
মাদরাসা ও গিয়াসনগর দাখিল মাদরাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বড়লেখা
উপজেলার ৮৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ টি
প্রাইমারী স্কুল, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ২টি মাদ্রাসা রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ১০ জুলাই পর্যন্ত
বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
মাধ্যমিক
শিক্ষা অফিসার সমীর কান্তি দেব জানান, সোমবার ঈদের ছুটি শেষে স্কুল,
মাদ্রাসা ও কলেজ খুলছে। কিন্তু ১৫-২০ দিন ধরে ভারী বর্ষণে পানি বৃদ্ধি
অব্যাহত থাকে। এতে হাকালুকি হাওর পাড়ের ২০টি প্রতিষ্ঠান তেিলয়ে গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়, ছিদ্দেক আলী, উচ্চ বিদ্যালয়,
কানসাই হাকালুকি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিম বর্নি, পাকশাইল আইডিয়েল,
বর্নি আদর্শ, মাইজগ্রাম, ইটাউরি হাজী ইউনুছ মিয়া মেমোরিয়েল, হাজী শামছুল হক
আদর্শ, ইউনাইটেড, ঈদগাহবাজার উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১৮টি মাধ্যমিক স্কুল,
সুজানগর পাথারিয়া কলেজ, এম. মুন্তাজিম আলী মহাবিদ্যালয়, ফকিরবাজার দাখিল
মাদ্রাসা ও গল্লাসাঙ্গন দাখিল মাদ্রাসা। ৬ জুলাই থেকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার
রুটিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেসব এলাকার রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ বন্যায়
নিমজ্জিত সেগুলোর নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত রাখার চিন্তা ভাবনা চলছে।
এব্যাপারে সোমবার জেলায় সভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
সহকারী
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল¬াহ জানান, উপজেলার ৬৮
প্রাইমারী স্কুলে বন্যার পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ১৫টি স্কুলের শ্রেণীকক্ষ ও
অফিস কক্ষ ৫-৭ ফুট, ৫৩টি স্কুলের রাস্তা, মাঠ ও শ্রেণীকক্ষ ৩-৪ ফুট পানির
নিচে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ স্কুলের আসবাবপত্র, জরুরী ফাইলপত্র, বই ভিজে
সম্পুর্ণ নষ্ট হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলো হচ্ছে, হাল্লা,
হাকালুকি, দক্ষিণ বাগিরপার, কবিরা, সালদিগা, রাঙাউটি, কামিলপুর, ইসলামপুর,
শ্রীরামপুর, কাঞ্চনপুর, খোঠাউরা, টেকাহালি, ঘুলুয়া সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যলয়। এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা তালা খুলতেও স্কুলে যেতে পারছেন না।
জুড়ী
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাজন কুমার সাহা জানান, তার উপজেলায় ২০
প্রাইমারী স্কুল বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে। শনিবার স্কুল খুললেও প্রধান
শিক্ষকরা রাস্তাঘাট ও স্কুলের মাঠ শ্রেণীক্ষ অফিস ডুবে থাকায় স্কুলে যেতে
পারেননি। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলো হচ্ছে নিশ্চিন্তপুর, নয়াবাজার শিশু কল্যাণ,
তালতলা খাগটেকা, কালনিগড়, জাঙ্গিরাই, উত্তর জাঙ্গিরাই সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়।
মাধ্যমিক
শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাাহি জানান, জুড়ীতে বন্যায় ৭টি মাধ্যমিক স্কুল ও
কলেজ নিমজ্জিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নিরোদ বিহারি উচ্চ বিদ্যালয়, মুক্তদির
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জায়ফুরনগর উচ্চ বিদ্যালয়, হাকালুকি আশ্রয়ন উচ্চ
বিদ্যালয়, সাগরনাল ফুলতলা শাহনিমাত্রা মহাবিদ্যালয়, জাঙ্গিরাই দাখিল
মাদ্রাসা। এসব স্কুলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেন না। বন্যাদুর্গত
এলাকার এসব স্কুলগুলোর শ্রেণী কার্যক্রম ও ৬ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য অর্ধ
বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করছেন