ঝুঁকিতে কুলাউড়ার মনু ব্রিজ

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ মনু নদের অব্যাহত ভাঙনে  কুলাউড়া উপজেলার মনু ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এ সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এতে এ ইউনিয়নের চাতলাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত শুল্ক স্টেশনে যাতায়াতে ভোগান্তিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটবে। এদিকে, মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। সম্প্রতি এমন একটি ভাঙন সৃষ্টি হলে এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে তা বেঁধে দিয়েছে। এতে উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ১৫/২০টি গ্রাম রক্ষা পায়।
সরজমিনে দেখা যায়, চাতলাপুর এলাকায় মনু ব্রিজের পাশে প্রতিরক্ষা বাঁধের ক্রমাগত ভাঙন সেতুর গোড়ায় গিয়ে ঠিকেছে। চাতলাপুরের আব্দুল আহাদ, উস্তার মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, এখনই মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই উজানের ঢলের স্রোতে মনু ব্রিজের পূর্ব দিকের অংশ ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিছ্ন্নি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সেতু ভেঙে গেলে শরীফপুর ইউনিয়নবাসীর সরাসরি যাতায়াতসহ ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা জানান। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপ্রথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের বিষয়ে লিখিত পত্র দিয়েছেন। শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই শরীফপুর ইউনিয়ন একটি বিচ্ছন্ন এলাকা। এ এলাকায় ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে যাতায়াতে একটি ইমিগ্রেশন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি শুল্ক স্টেশন আছে। তাই এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভেঙে গেলে পুনরায় নতুন সেতু স্থাপন করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালে মনু ব্রিজ নির্মিত হয়েছিল। এর ফলে শরীফপুর ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ সরাসরি শমশেরনগর হয়ে জেলা সদর মৌলভীবাজারসহ সারা দেশে যাতায়াত করতে পারছে। এছাড়া চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ ভিসা নিয়ে দুই দেশের যাত্রীদের যাতায়াতও চলছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, সওজ-এর চিঠি পেয়ে তারা ব্রিজ এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। ব্রিজটি একুট দেবে যাচ্ছে বলে মেনে হচ্ছে। এই ভাঙন ঠেকাতে এখানে ব্লকের কাজ করতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন বাজেট ও শুষ্ক মৌসুম। এরপরও এই সময়ে কিছু করা যায় কি না এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করছেন বলে জানান। স্বেচ্ছা শ্রমে ভাঙন প্রতিরোধ এদিকে, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ভাঙন দিয়ে পানি বের হওয়া শুরু হলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামের মানুষ বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েন এবং বাঁধ রক্ষা করেন। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মিজানুর রহমান ও আবুল কালাম জানান, যদি ভাঙন রোধ করা সম্ভব না হতো, তাহলে উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর, ভূঁইগাঁও, আলীপুর, দত্তগ্রাম, সোনাপুর, ইসমাইলপুর, রনচাপসহ ১৫/২০টি গ্রামে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, মনু নদর ৩৯টি স্থানকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছেন। বেশ কিছু বাঁধে তারা কাজ করেছেন তবে বরাদ্দের অভাবে অনেকগুলোতেই কাজ করা সম্ভব হয়নি।

Post a Comment

Previous Post Next Post