কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিটি অরক্ষিত!

চুরি হচ্ছে মূল্যবান শ্বেতপাথর

কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিটি অরক্ষিত!

এস আলম সুমন/একেএম জাবের, কুলাউড়া: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডানকান ব্রাদার্সের লংলা চা বাগানের রাবার বাগান এলাকায় রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন খিৃস্টান সম্প্রদায়ের লোকদের সমাধি লংলা সিমেট্র্রি। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন দেশের চা শিল্পের বিকাশে মূল্যবান অবদান রাখা ব্রিটিশ ট্রি প্লান্টার ও তাদের স্বজনরা। অরক্ষিত ও অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা সিমেট্র্রিগুলোর মূল্যবান শ্বেতপাথরগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। অথচ ঐতিহাসিক নিদর্শন এই সিমেট্রি হতে পারে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিটি অরক্ষিত!

লংলা চা বাগান ঘুরতে আসা পর্যটক প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সূর্যদীঘল বাড়ি’র নির্মাতা ও স্থপতি মসিহ উদ্দিন সাকের, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক চিফ পার্সার জেবুননেছা ও অধ্যাপিকা হোসনে আরা হান্নান বলেন, চা বাগান সৃজনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন ও স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে এখানে শায়িত আছেন তাদের কবরকে এভাবে অযতœ-অবহেলায় ফেলে রাখা ঠিক হয়নি। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে পূর্বে এই সিমেট্রির একটা জৌলুস ছিল যা বর্তমানে আর নেই। অনেক সমাধির মূল্যবান পাথরগুলো ভেঙ্গে গেছে আবার অনেক সমাধির শ্বেত পাথর নেই মনে হচ্ছে চুরি হয়ে গেছে। এছাড়াও অধিকাংশ সমাধির শায়িতদের নেমপ্লেট নেই। ঐতিহাসিক নিদর্শন এই সিমেট্রিগুলো সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত নতুবা কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে এগুলো। তাছাড়া এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে চা বাগানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য সিমেট্রিটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে।

কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিটি অরক্ষিত!

লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজর ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, লংলা চা বাগানে অবস্থিত খৃস্টানদের কবরগুলো একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এখানে ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ থেকে দীর্ঘদিনের কালের সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাসের দর্পণ এই সিমেট্রি। আগে এগুলোর যতœ ও ফুলের বাগান থাকলেও ইদানিং সংরক্ষণের অভাবে অনেকগুলো শ্বেত পাথরের কারুকার্যময় এপিটাফগুলো নষ্ট যা দুর্বৃত্তরা খুলে নিয়ে গেছে। কারণ অনেকেই মনে করে খৃস্টান সম্প্রদায়ের লোক মরার পর তাদের ব্যবহৃত মূল্যবান সম্পদ তাদের সাথে দিয়ে কবরস্ত করা হয়। সেজন্য ওইগুলো চুরির জন্য নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। বাগান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নজর দেয়া উচিত।

কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিটি অরক্ষিত!

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক সমাধিতে নেই শায়িতদের পরিচিতি। অনেকটির মূল্যবান শ্বেত পাথর ও কবর ভেঙে ফেলা হয়েছে। নেই কোনও সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পাহারাদার ও প্রাচীর। যারা তাদের জীবন দিয়ে ও নিজের জন্ম ভিটে-মাটির মায়া ত্যাগ করে চা উৎপাদনে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাদের কবরগুলোও সংরক্ষণের নেই কোনও উদ্যোগ। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ রয়েছেন উদাসীন। এখনো অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে অজুহাত দেখিয়ে কোন মন্তব্য করেননি এ বাগানে কর্মরত এক কর্মকর্তা। সিমেট্রি দেখতে আসা কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী কল্যাণ চন্দ্র পলাশ, আশিকুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান সাদী, রুবেল আহমেদ, শাহাদাৎ হোসেন মুহিম , সুদীপ আচার্য্য বলেন ইতিহাসের নিদর্শন এই সিমেট্রি এসে দেখি এখানে কোন পাহরাদার নেই। সিমেট্রির অনেক সমাধি ভাঙ্গা ও ফুলবাগানটি অযত্নে পড়ে আছে। এগুলো সংরক্ষণ ও পুনসংস্কার করা উচিত।
জানা যায়, ১৮৫৭ সালে মালনীছড়া চা বাগান স্থাপনের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এর ঠিক ২৩ বছর পর ১৮৮০ সালে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্রিটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষাবাদ শুরু করে। এ সময় ব্রিটেন থেকে নিয়ে আসা হয় অভিজ্ঞ ‘টি প্ল্যান্টার’ দের। ১৮৮৫ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ে উপমহাদেশ ব্রিটেনের দখলে থাকাবস্থায় যেসব ব্রিটিশ ‘টি প্ল্যান্টার’ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে ২৮ জনকে সমাহিত করা হয় লংলা চা বাগানের এই সিমেট্র্রিতে।

Post a Comment

Previous Post Next Post