বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক সভায় সংগঠন পরিচালক শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কে জ্যাকসনহাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত ওই সভায় পরিচালক শ্যামল চক্রবর্তী বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর পাঠকদের মধ্যে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সেই সমালোচনার ঝড় আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যখন শ্যামল চক্রবর্তীর সম্পূর্ণ বক্তব্য ও তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে শ্যামল বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার সূচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দায়ি করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুলহাতা ব্লাউজ নিয়েও সমালোচনা করে।
শ্যামল চক্রবর্তীকে নিজেকে একসময়কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেছে, “মোহ কেটে গেছে, সত্য বলার সময় এসেছে।” বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে শ্যামল বলেছে, ‘বাংলাদেশে শুধু বাঙালি থাকেনা। বাংলাদেশে চাকমা থাকে, বাংলাদেশে গাঢ় থাকে, বাংলাদেশে কুকি থাকে, হাজং থাকে আরো অন্যান্য জাতি থাকে।’ গরু জবাই বন্ধের দাবি জানিয়ে শ্যামল চক্রবর্তী বলেছে, ‘বাংলাদেশে যেভাবে গো-হত্যা চলছে এটা মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে আইন করে বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধ করা হোক।’ এদিকে, শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্যের প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনা হয় সোস্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকে।
বিশেষ করে ফেসবুকে বহুল আলোচিত হিন্দু ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট নয়ন চ্যাটার্জীর স্ট্যাটাসের পর থেকে সমালোচনায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য প্রসঙ্গে নয়ন চ্যাটার্জী তার পেইজে লিখেছেন- “শ্যামল চক্রবর্তী’ নামক যে ব্যক্তি এ কথাগুলো বলছে- সে নিজের মুখেই স্বীকার করছে সে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অর্থাৎ এ হিন্দুটিও এক সময় আওয়ামীলীগ করতো ! এখন সে বলছে- ‘মোহ কেটে গেছে, সত্য বলার সময় এসেছে।’
আসলে এখন যে সকল হিন্দু আওয়ামীলীগ করছে, আওয়ামীলীগের বেশ ধরে নানান সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে,আওয়ামীলীগকে চুষে চুষে খাচ্ছে, আপনি নিশ্চিত থাকুন, দুদিন পর তাদেরও মোহ (!) কেটে যাবে, তারা খোলশ ছাড়িয়ে আসল মুখ নিয়ে বের হবে। দেখা যাবে এখনকার আওয়ামী হিন্দুরা দুইদিন পর ভারতীয় পাউয়ারে মুখ ফুটে কথা বলা শুরু করবে। এরাই দুদিন পর শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলা শুরু করবে, জোর গলায় বলবে- “বাংলাদেশে হিন্দুদের দেশ, শেখ হাসিনাকে আমরাই ক্ষমতায় বসিয়েছি, তার কোন কৃতিত্ব নেই, হাসিনা বাংলাদেশ দখল করেছে। তাই শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে হিন্দুদেরকে বাংলাদেশ লিখে দেওয়া হোক”।
ইতিহাস বলে, হিন্দুরা চিরকালই ছিলো বেঈমান জাতি, বিশ্বাস না হয় ব্রিটিশ আমলে তাদের ইতিহাস খুলে দেখুন। এমনকি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থেও কিনতু তাদেরকে অবিশ্বাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই আপনি তাদেরকে যতই সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু করে আদর-যত্ন করেন, সম্মান করে নিজ পাশে বসান না কেন, লাভ নেই। সুযোগ পেলে সে ঠিকই আপনার গলায় ছুরি চালাবেই চালাবে….”
এদিকে আরো ঘি ঢালেন এই সময়ের আরেক আলোচিত মুছলিম ব্লগার, ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক রাজিব খাজা উনার ৭ লাখ ৪৪ হাজার ফলোয়ার সমৃদ্ধ ফেসবুক আইডি “Rajib Khaja” ও ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার সাবস্ক্রাইবারওয়ালা পেইজ “Rajib Khaja Official” থেকেও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবি জানানোর পর রাজিব খাজা এই সংগঠনটিকে ‘কট্টর সাম্প্রদায়িক ও উগ্র ধর্মান্ধ সংগঠন’ বলে উল্লেখ করে ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’কে বাংলোদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান। রাজিব খাজা তার স্ট্যাটাসে লিখেন, “মাত্র ৮% হিন্দু বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবী জানায়! অথচ সংখ্যায় ৯০% হয়েও মুসলিমরা মূর্তি পূজা বন্ধ করার দাবী জানাতে সাহস পায় না! কোনদেশে বাস করছি আমরা? এটা কি স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি ভারতের কোন অঙ্গরাজ্য?
এরপরও মুসলিমরা নাকি সাম্প্রদায়িক/ধর্মান্ধ! আর হিন্দুরা নাকি খুব উদারও মুক্তমনা। অসাম্প্রদায়িকতা কত প্রকার ও কি কি তা দাদাবাবুদের কাছ থেকে শেখা উচিৎ আমাদের! মাত্র ৫% হয়ে তারা এধরনের উস্কানিমূলক কথা বলে, যদি ৯০% হত তাহলে কী করত একবার শুধু চোখ বন্ধ করে ভাবুন। সেক্ষেত্রে একটা মুসলিমও এদেশে বাস করতে পারত না, এই সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে মুসলিমদেরকে দেশছাড়া করত। শরনার্থী হয়ে বঙ্গোপসাগরে ভাসতে হত আমাদের। অথচ ওদের প্রতি আমরা কতটা সহানুভুতিশীল, রাজার হালে আছে এদেশের হিন্দুরা, মুসলিমদেরকে বঞ্চিত করে সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, সব ধরনের চাকরী বাকরী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাদের অগ্রাধিকার। হিন্দুরা যে পরিমান সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মান্ধ তার ১%ও যদি মুসলিমদের মধ্যে থাকত তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসটা অন্যরকম হতে পারত।
সরকারের কাছে আমরা দাবী জানাই- অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক ও
কট্টরপন্থী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হোক এবং
এদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক।” বিস্তারিত উনার ব্লগে।
