কুলাউড়ায় যুবলীগ নেতা সেন্টু এখন জাসাস ও জিয়া সৈনিক দলে



কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বরমচাল ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু এখন জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দল ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের বড় পদের নেতা। গত ১২ সেপ্টেম্বর জেলা জাসাসের আহবায়ক মো. শামসুল ইসলাম রাসেল ও সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন তালুকদার স্বাক্ষরিত ৫৯ সদস্য বিশিষ্ট কুলাউড়া উপজেলা জাসাসের আহবায়ক কমিটিতে যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টুকে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রাখা হয়। অন্যদিকে গত ৬ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দল কুলাউড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক মোঃ হায়দার আলী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ নজরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মোঃ মকবুল আলী স্বাক্ষরিত ২৫ সদস্য বিশিষ্ট বরমচাল ইউনিয়ন জিয়া সৈনিক দলের কমিটিতে আজমল আলী শাহ সেন্টুকে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়। কমিটি অনুমোদনের পর বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা সকলেই অভিযোগ তুলছেন, আজমল আলী শাহ সেন্টু আওয়ামীলীগের দুঃশাসনের সময় নিজের বিতর্কিত সকল অপকর্ম ঢাকতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে  নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন কমিটিতে ঢুকছেন। আর সংশ্লিষ্ট কমিটির শীর্ষ নেতারা কোন ধরনের যাচাই-বাছাই না করে কেন বার বার জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন কমিটিতে সেন্টুকে স্থান দিচ্ছেন সেটার কোন উত্তর পাচ্ছেন না তৃণমূলের নেতাকমীরা। 
এদিকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে বিতর্কিত যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টুকে নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে বিএনপির কমিটি থেকে বহিস্কারের জন্য গত ২৯ জুলাই জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক বরাবরে পাঠানো হয়। পরে উপজেলা বিএনপির নির্দেশে বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটি জরুরী সভা করে যুবলীগ নেতা আজমল আলীকে বিএনপির কমিটি থেকে বহিস্কার করে। 
জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল জহুর ডেন ও যুগ্ম আহবায়ক মো: তোফায়েল হোসাইন খান জমসেদ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে আজমল আলী শাহ সেন্টুকে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির ৩৯ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়। 
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু বিগত ৫ আগস্টের পর নিজের সকল অপকর্ম ঢাকতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেন। সেন্টু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আওয়ামী লীগের সকল কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। গত বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নির্বাচনী প্রচারণায় হাতে লিফলেট নিয়ে যুবলীগ নেতা সেন্টুকে সরব থাকতে দেখা যায়। ২০২২ সালের ১৪ মার্চ বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের আয়োজনে ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আজমল আলী শাহ সেন্টু সভাপতি ও নিপার আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা জানান, ওইসময় বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলের মাধ্যমে সেন্টুকে সভাপতি করা হয়। কাউন্সিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ২০২২ সালের মার্চ মাসে বরমচাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন” বই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ অনুষ্ঠানে যুবলীগ নেতা সেন্টু অতিথি ছিলেন। এমনকি দলীয় শীর্ষ নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের সাথেও তোলা সেইসকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। 
বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু জানান, ‘আমার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, আমি মাজারের খাদিম, বিভিন্ন সময় দলীয় নেতারা আমার কাছে দোয়া নিতে এসেছিলেন। এলাকার একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল জহুর ডেন গণমাধ্যমকে জানান, জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ৯ আগস্ট বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপি সভায় রেজুলেশন করে আজমল আলী শাহ সেন্টুকে বিএনপির কমিটি থেকে বহিস্কার করা হয়। 
কুলাউড়া উপজেলা জাসাসের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব সালমান হোসাঈন গণমাধ্যমকে বলেন, আজমল আলী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলো কিনা সেটা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। এমনকি সে উপজেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছে সেটাও আমরা জানিনা। জেলা জাসাসের সভাপতি তাকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে উনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দলের কুলাউড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক মোঃ হায়দার আলী মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামীলীগের কোন দোসরের স্থান জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিকে দলে নাই। বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত আজমল আলী শাহ সেন্টুকে আমরা শোকজ করেছি। তিনি যে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তার অনেক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। এখন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে তাকে বরমচাল ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি পদ থেকে বহিস্কার করে নতুন একজনকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আজকে (রবিবার) বিকেলে বরমচাল ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দলের পরিচিতি সভা ছিল সেটি আমরা স্থগিত করেছি। 

Post a Comment

Previous Post Next Post