![]() |
এ ঘটনায় দক্ষিণ সুরমায় আটক নাজমুদ্দিন জেলহাজতে, চোর চক্রের সদস্য রাজু রিমান্ড শেষে আদালতে |
এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া: আড়াই মাসের মধ্যে একই পরিবারের পর পর দু’টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। দু’টি চুরির ঘটনায়-ই থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনা অভিযোগ নিলেও মামা রেকর্ডে কালক্ষেপণ করছে পুলিশ। এদিকে একই পরিবারের দুটি মোটরসাইকেল পরপর আড়াই মাসের মাথায় চুরি হওয়ায় নানা রকম আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ওই পরিবার। এসব বিষয় নিশ্চিত করেন সিলেট মহানগরীর ২৯নং ওয়ার্ডের লালবাগ আবাসিক এলাকা প্রকাশ ধোপাঘাটের বাসিন্দা আজম আলীর ছেলে মোঃ ইবরাহিম রহমান মাহিন (২৩)।
তবে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, একই পরিবারের পর পর দুটি মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর ওই বাড়ির দিকে রাত্রিকালীন টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বাড়িটি। মোটরসাইকেল চোরদের বিষয়ে পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার চৌকস কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছে। ইতিপূর্বে এসআই আমির হোসেনও এসআই সহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে চৌকোষ পুলিশ টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য গোলাপগঞ্জ এলাকার নজম উদ্দিন (২৫) ও রাজু আহমদ (২২) কে আটক করা হয়েছে।
মোটরসাইকেল চোর রাজুকে আদালতের নির্দেশক্রমে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩জুন কোর্টের শোপর্দ করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী কার্যক্রম অব্যাহত আছে। চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোর চক্রকে গ্রেফতারের পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মাহিন এর মালিকানাধীন কালো রঙের মোটরসাইকেলটি (রেজিস্ট্রেশন নং-সিলেট মেট্রো-ল-১২-২৭৯১, চেসিস নং-PS637AE71N6H81656, ইঞ্জিন নং-CE7BN2400434) গত ৩০ মে শুক্রবার রাত ১১টায় সাবধানতা অবলম্বন করে ফ্ল্যাক্সিবল গেইটের ভিতরে রেখে ঘুমোতে যান। পরদিন ৩১ মে শনিবার সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে গাড়িটি যথাস্থানে পাননি। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে রাত অনুমান ৩টার দিকে অন্ধকার অবস্থায় ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা চোর গেইটের তালা এবং মোটরসাইকেলের প্রত্যেকটি তালা ভেঙ্গে এটি চুরি করে নিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজসহ শনিবার তিনি দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। পুলিশ অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে ও অনুলিপিতে কোন প্রিসিভ সিল ব্যবহার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এর পূর্বে একইভাবে গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে বাড়ির গেইটের বাইরে সতর্কতার সাথে মোঃ ইবরাহিম রহমান মাহিনের পিতা আজম আলীর (৬৬) (রেজিস্ট্রেশন নং-সিলেট হ-১৪-৪৬৮৮, চেসিস নং-BRME3GDBXDG050447, ইঞ্জিন নং-147EMF16B88447) ৮০ সিসির লাল রঙের DAYUN মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। অনেক খোঁজাখুজির পর মোটরসাইকেলটি না পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুরূপ একটি অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ অদ্যাবধি এর কোন হদিস বের করতে পারেনি।
এদিকেসিলেট মহানগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র মেতে উঠেছে এসব কাজে। তবে মোটরসাইকেল চুরির বিষয়টি ভিন্ন । মোটরসাইকেল চুরির রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট যার নেটওয়ার্ক বিস্তীর্ণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হবিগঞ্জ থেকে শুরু করে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় । এসব এলাকার বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বা মামলার পলাতক আসামিরা সিলেট নগরীর বা আশপাশের বিভিন্ন কলোনির ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থান করে ডাকাত সোর্স বা নিরব স্থানে ছিনতাই এবং ছদ্মবেশে বিভিন্ন অজুহাতে বাসা বাড়িতে গিয়ে দামি গাড়ি মোটরসাইকেল চুরির উদ্দেশ্যে রাত্রিকালীন সময়ে বাসা বাড়িতে ঢোকার কলাকৌশল অবলম্বন করে। মোটরসাইকেল চোরদের পাকড়াও করতে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে কিন্তু কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই চক্রকে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার এক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা এস আই দীপরাজ ধর প্রিন্স এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আন্ত বিভাগ মোটরসাইকেল চোর চক্রের সক্রিয় ৬ সদস্যকে গ্রেফতারপূর্বক ৩ টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পুলিশ জানায়, ১৫ মে ২০২৫ তারিখে সকাল ৮ঃ৩৫ মিনিটে সোবহানীঘাটস্থ বাসা নং-৮২, রোড নং-০৩, লতিফিয়া টাওয়ারের নিচ হতে পোল্যান্ড প্রবাসী জনৈক নাজমুল ইসলাম এর ব্যবহৃত ০১টি ইয়ামাহা FZS.V3. মোটরসাইকলটি অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নং -৪৬। ২৭ মে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানাধীন চান্দুরা শ্যামলীঘাটস্থ পাসওয়ার্ড নামীয় দোকানের সামনে হতে মোটরসাইকেল চোর চক্রের সক্রিয় সদস্যদের আটক করা হয়। তারা হলো ১। মোঃ আজিজুল ইসলাম (২৯) পিতা- মোঃ আরিফুল ইসলাম, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ২। আবুল কালাম (৩২) পিতা- সামছুজ্জামান, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৩। প্রনয়ন দাস (২৬) পিতা- মৃত পরেশ দাস, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৪। সাইফুজ্জামান (৩২) পিতা- বদিউজ্জামান, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৫। মোঃ রেজাউল করিম (২৯) পিতা- মৃত আবুল বাহার, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৬। লোটন চৌধুরী (৩৩) পিতা- প্রাণ কমল চৌধুরী, সর্বসাং-চান্দুরা, থানা- বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হতে প্রেরণ করা হয়েছে।
![]() |
কোতোয়ালি থানা পুলিশের অভিযানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আটক মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৬ সদস্য ও উদ্বার হওয়া ৩ মোটরসাইকেল |
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া জানান, ঈদুল আযহা কে নিরাপদ রাখতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সজাগ নজরদারি রয়েছে। মোটরসাইকেল চোরদের পাকড়াও করতে মাঠে কাজ করছে এস এমপির চৌকস টিম।