জুলাই যোদ্ধা চা বিক্রেতা পুলিশে নির্যাতনে কাতরাচ্ছে হাসপাতালে, এএসআই সাময়িক সাসপেন্ড


এমদাদুর রহমান  চৌধুরী  জিয়া: পেশায় ছিলেন (সিএনজি) অটো রিক্সা চালক।  এখন তিনি চা বিক্রেতা। সেই ইসলাম উদ্দিন  আসলে জুলাই যোদ্ধা। কিন্তু কিছুতেই  পিছু ছাড়ছে না তার  দুর্দশা। 

জুলাই আন্দোলনে  সিলেটের কুয়ার পাড় এলাকার  ইসলাম উদ্দিন  মাথায় আঘাত প্রাপ্ত   হন। সেই থেকে সিএনজি চালক হিসেবে  পেশাটি বহন করতে পারছেন না শারিরীক কারনে। কিন্তু বেঁচে থাকা আর জীবন জীবিকার তাগিদে  দিনাপাত  কাটাচ্ছেন  একজন চা বিক্রেতা হিসেবে। কে জানে সেখানেও মন্দ আছে তার কপালে।  জুলাইয়ের গেজেট ভুক্ত যোদ্ধা হয়ে  পুলিশী নির্যাতনে  আহত অবস্থায়  আজ ও কাতরাতে হবে   হাসপাতালের বেডে!

পুলিশ বেধরক  মারপিট করে   জুলাই যুদ্ধা শোনে  এমনটাই অভিযোগ উঠেছে  সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের  কোতোয়ালি  মডেল থানার  লামাবাজার  পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক,( এ,এস, আই)  জসিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে। তবেসিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ অভিযুক্ত এ,এস, আই জসিম উদ্দিনকে  প্রথমে  ক্লোজ করলেও  বৈষম্য বিরোধী  ছাত্র আন্দোলন  নেতৃবৃন্দ ও এনসিপি  সিলেট জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ   পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে  দেখা করে কথা বলার পর  করা হয় সাময়িক বরখাস্ত। 

জানা যায়, শনিবার২১ জুলাই ভোরবেলা সিলেট  নগরীর শেখঘাট জিতুমিয়ার পয়েন্টে  প্রতিদিনের মতো  ফজরের নামাজ  শেষে  অটো ভ্যান দিয়ে  চা বিক্রির  কার্যক্রম শুরু করেন  ইসলাম উদ্দিন নামে  এক দোকানি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে জানতে চায়  এত সকাল দোকান খোলা কেন? পুলিশের তাড়নায়   ভোর বেলাএকা থাকায় তাৎক্ষণিক  এলাকা ছেড়ে চলে যায় সে। পরবর্তীতে দুই একজনকে বলে  কিছুক্ষণ সময় পের করে   আবারো যায় কর্মস্থলে  কিন্তু পুলিশ যেন কোন কারনে  জেদ করে বসে আছে  তার ওপর  জানত না সে। তাকে লক্ষ্য করে পুলিশ আসতে দেখলে  মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে  এতে  আরো ক্ষিপ্ত হয় পুলিশ। শুরু হয় ইসলাম উদ্দিন এর উপর  পুলিশি কায়দায় নির্যাতন। 

ব্যাপক  মারধর করলেও  তাকে পুলিশের  ভ্যানে তুলতে ব্যর্থ হয় অনেকটা। চারিদিক থেকে লোকজন আসতে শুরু করায়  

তড়িঘড়ি করে   ইসলাম উদ্দিনকে রাস্তায় ফেলে  ত্যাগ করে  ঘটনাস্থল  এ,এস,আই জসিমউদ্দীনের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের ওই টিম।

খবর পেয়ে জুলাই যোদ্ধাারা ইসলাম উদ্দিন কে নিয়ে যায়  সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।সেখানে তিনি  ভর্তি আছেন। চলছে তার  চিকিৎসাধীন সেবা।

এ ঘটনায়  ক্ষোভের আগুন জ্বলছে  জুলাই যোদ্ধা, জাতীয়তাবাদী শক্তি, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপি, এন সি পি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সহ  ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তি  ও পুরো সিলেট  নগরবাসীর মধ্যে।

দুপুরে এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট এর মিডিয়া সেলের সম্পাদক ও যুগ্ম সদস্য সচিব ফখরুল হাসান জানান, সিলেটের লামাবাজার এলাকায় ফজরের নামাজের পর চায়ের দোকান খোলার কারণে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন লামাবাজার এলাকার গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা ইসলাম উদ্দিন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের  facebook ভেরিফাইড পেজ থেকে  জানানো হয়  ভিন্ন কথা, ঘটনাটি রাতে  ঘটেছে দাবি করে, সিলেট মেট্রোপাল্টন পুলিশ উল্লেখ করে  তাদের বার্তায়, নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিল  ও চুরি ছিনতাই  প্রতিরোধে রাত্রিকালীন পুলিশের  বিশেষ টহল   টিম  কাজ করছে ২১/৬/ ২০২৫ রাতে   লালাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির  এমসিসি  নং১৭২/২৫ মূলে  এ এস আই  জসিমউদ্দীনের  নেতৃত্বে একটি মোবাইল টিম  জিতু মিয়ার পয়েন্ট  এলাকায়  দায়িত্ব পালনকালে  রাস্তায়  ভ্যান করে চা বিক্রি করছিল  জনৈক্ ইসলাম উদ্দিন। রাত্রিকালীন  বিভিন্ন সময়   জিতু মিয়ার পয়েন্ট ও আশপাশ এলাকায়  অপরাধ সংগঠিত হওয়ায় এ এসআই জসীম উদ্দিন  ওখান থেকে চা বিক্রেতা  ইসলাম উদ্দিনকে চলে যেতে বলেন।

ইসলাম উদ্দিন চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তিনি একজন জুলাই যোদ্ধা ,  পুলিশ  কখনো তাকে দোকান বসাতে বাধা প্রদান করেনি বলে তার সাথে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে  ভিডিও করতে থাকে। মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ নিয়ে  পুলিশের সাথে ইসলাম উদ্দিন এর  তর্ক বিতর্ক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

এদিকে, সিলেটে গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা ইসলাম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত  করা হয়েছে।  সংযুক্ত করা হয়েছে পুলিশ লাইনে। পাশাপাশি এই ঘটনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া  সাইফুল ইসলাম  জানান,  অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই   অভিযুক্ত  পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে প্রথমে ক্লোজ করা হয়েছে  পরে সাময়িক বরখাস্ত  করা হয়েছে।   গঠিত হয়েছে  তদন্ত  কমিটি।  তদন্ত কমিটিকে  প্রথমে  ৩কার্য দিবস  মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হলেও  পরবর্তীতে বলা হয়  দ্রুত সময়ের মধ্যে  প্রতিবেদন জমা দিতে।   প্রতিবেদনের সুপারশি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে বিভাগীয় ব্যবস্থা। 

জুলাই যোদ্ধা ইসলামকে নির্মমভাবে মারধরের  ঘটনার  খবর পেয়ে হাসপাতালে  ছুটে যান    ছুটে যান জুলাই যোদ্ধা, সিলেট জেলা ও মহানগর এনসিপি, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

সেখান থেকে এসে  শনিবার রাতে  সিলেট জেলা এনসিপির যুগ্ম-সমন্বয়কারী ফয়সল আহমেদ, মহানগরের যুগ্ম-সমন্বয়কারী মুসতাক আহমদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তাওফিক এলাহী তাকরীম, জুবায়ের, কাওসার গাজী ও মুহিদ হাসান শান্তসহ একটি প্রতিনিধি দল এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানার সাথে সৌজন্য  সাক্ষাৎ করেন।

 আলোচনা শেষে তিনি অভিযুক্ত এএসআই জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান। তবে তারা জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা জসিম  ও সাথে পুলিশ সদস্যের  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন  প্রশাসনের কাছে।

জুলাই যোদ্ধাকে মারধরের ঘটনা অভিযুক্ত  সিলেট মেট্রোপলটন পুলিশের কোতোয়ালী থানা লামা বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সেই  এএসআই   জসীমউদ্দীনের  গ্রামের বাড়ি  কুমিল্লায় বলে সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post