নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে প্রতিদিন ধরা পড়ছে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা চোরাই চিনির চালান। সিলেটে যা ‘বুঙ্গার চিনি’ হিসেবে পরিচিত। কোটি কোটি টাকার চিনি ধরা পড়লেও থামছে না চোরাচালান।
অভিযানকালে ট্রাক কিংবা পিকআপের চালক হেলপার ধরা পড়লেও চালানের মালিক রাঘববোয়ালরা রয়ে যান অধরা।
বুঙ্গার চিনির কারবার অধিকতর লাভজনক হওয়ায় ও মুলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
গত কয়েক মাসে প্রায় শত কোটি টাকার ভারতীয় চিনি আটক হলেও চোরাকারবারিরা এখনো বেপরোয়া। গত ৪৮ ঘন্টায় সিলেটে ৩০ লাখেরও বেশি টাকার অবৈধ চিনি জব্দ করেছে পুলিশ। আটক হয়েছেন ৫ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারীরা অবৈধভাবে ভারতীয় চিনি নিয়ে আসেন। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রতি কেজি চিনির খুচরা বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৭ টাকা। আর সিলেটের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়। দ্বিগুণের বেশি লাভ হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকি জেনেই ‘বুঙ্গার চিনি’র ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করছেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সিলেট ও ঢাকার ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারাও রয়েছেন। ‘বুঙ্গার চিনি’র ব্যবসা অধিকতর লাভ হওয়ায় মাঝে মধ্যে বড় চালান ধরা পড়লেও খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় না। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেন। ফলে পুলিশের ধরপাকড়কে তারা পাত্তাই দিচ্ছেন না।
সূত্র জানায়, সীমান্ত থেকে বিভিন্ন থানা ঘুরে সিলেট শহরে আসে চিনির চালান। কিন্তু চিনি চোরাচালানরোধে অনেকটা নিরব ছিল জেলা পুলিশ। মাঝে মধ্যে যৎসামান্য চিনি জব্দের মধ্যেই ছিল জেলা পুলিশের তৎপরতা। গত ১০ জুলাই নতুন পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান যোগদানের পর জোরদার হয়েছে জেলা পুলিশের চোরাচালানবিরোধী কার্যক্রম। গেল ৪ দিনের ব্যবধানে চারটি অভিযানে জেলা পুলিশ প্রায় ৭৫ লাখ টাকার চিনি জব্দ করেছে। এর আগে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) প্রায় শত কোটি টাকার চিনি জব্দ করে।
জেলা ও মহানগর পুলিশের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৫ দিনে জেলা পুলিশ ৭টি অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় হাজার বস্তা চিনি জব্দ করে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। অভিযানে আটক হয় ১২ জন। এদের সবাই ট্রাক ও পিকআপ চালক।
অপর দিকে চলতি মাসে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) ১১টি অভিযান চালিয়ে ৪ হাজার ২৮২ বস্তা চিনি জব্দ করে। জব্দকৃত ২ লাখ ১৪ হাজার ১শ’ কেজি চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ২ হাজার টাকা। অভিযানকালে ২০ চালককে আটক করে পুলিশ।
পুলিশের অভিযানে চোরাইচিনি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও পিকআপের চালকরা আটক হলেও এখনো চালানের মূল মালিকদের কেউই আটক হয়নি। অভিযানের পর মূল হোতাদের সনাক্তকরণে পুলিশী তৎপরতাও খুব বেশি চোখে পড়ে না। চোরাই চিনি জব্দ ও চালক আটকের মধ্যেই থমকে যায় পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম। যে কারণে চোরাকারবারে বিনিয়োগকারীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চিনি চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘যখনই চোরাচালানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তখনই অভিযান হচ্ছে। ইতোমধ্যে বড় বড় অভিযান হয়েছে। চোরাকারবারের মূলহোতাদের চিহ্নিত করার কাজও করছে পুলিশ।’
সিলেটের পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, জনপ্রত্যাশা পূরণে জেলাপুলিশ কাজ করছে। তিনি যোগদানের পর চোরাই চিনির কয়েকটি বড় চালান আটক হয়েছে। কিন্তু চালানের সাথে যারা আটক হচ্ছে তারা ‘ক্যারিয়ার’। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল হোতাদের সনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। - সিলেটভিউ