অরক্ষিত মধুমতি রেল ক্রসিংএ ট্রাক চালক কব্জি নিলো ট্রেন যাত্রীর

এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, কমলাপুর থেকে ফিরেঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুর। সেই কমলাপুরের রেলওয়ে থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এরিয়া যার নাম হচ্ছে মধুমতি ।

পুলিশ ফাড়ী সংলগ্ন রেলের অনুমতি বিহীন একটি লেবেল ক্রসিং (রেল ক্রসিং) এর নাম মধুমতি রেল ক্রসিং । যেখানে ঘটে থাকে সপ্তাহে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা।তারপরও হয়নি কোন ব্যবস্থা।

স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য চোরাই মালামাল পাচার করতে কমলাপুর রেলওয়ের বেশ কিছু জায়গায় অনুমতি বিহীন মাটি বা বালু ফেলে রেলওয়ের উপর দিয়ে ফাড়ী রাস্তা সৃষ্টি করেছে গাড়ি নেওয়ার জন্য ।

এটি পুলিশের নাকের ডগায়। রেল ওয়ের অনুমতি নেই। তারপরও বন্ধ হয় না। অনুমোদন নেই বলে থাকে না কোন গেইটম্যান ।

তবে থাকে চোরা কারবারিদের নিয়োগ করা সোর্স। চোরাই মালের গাড়িগুলো পাস করে দে সে।ইনফরমেশন দেয় পুলিশ আছে কিনা।

কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের খাতায়-কলমে নেই কোন গেইট ম্যান। অরক্ষিত এর এল ক্রসিং।

অনুমতি বিহীন বেশ কয়েকটি রেল ক্রসিং আছে কমলাপুরের রেলওয়ে থানার নিয়ন্ত্রিত এলাকায়।

কমলাপুরের নিয়ন্ত্রিত মধুমতি রেল ক্রসিং। যেখানে এবার কব্জি কর্তন হলো এক ট্রেন যাত্রীর।

তাও সে কব্জি নিয়ে গেল বালু ভর্তি একটি ট্রাক। যদিও পুলিশ ট্রাক তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে । কিন্তু আসলে হয়নি এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা। অজুহাত দেখাচ্ছেন অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী।

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোন বাদী না থাকলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা একটি নির্দেশনা রয়েছে বলে শোনা যায়।

কিন্তু সেখানে কমলাপুর রেলওয়ের ওসি ফেরদৌস আহমদ বিশ্বাস বলছেন অনুমতি বিহীন লেভেল ক্রসিং এর বিষয়ে তিনি উপরে চিঠি দিবেন। 

চিঠি দেওয়ার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

সংগঠিত ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বাদী হয়নি বলে এখনো মামলা নিতে পারেননি তিনি । তবে দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তি ওদুর্ঘটনায় জড়িত গাড়ির মধ্যে সমঝোতা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। উনি আপোষ নামার কাগজ পাবেন।

সব মিলিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের দায় সাড়া ভাবও উদাসীনতা দেখা যায় দুর্ঘটনার বিষয়ে।

জীবন সংকটাপন্ন মানুষের কিন্তু দায়িত্ব নিতে না রাজ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কেউই। ফোন রিসিভ করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলওয়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ফোনে ন পাওয়া গেলে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক(যান্ত্রিক) তাবাসসুম বিনতে ইসলাম এর সাথে তিনি পরামর্শ দেন অপারেশন বিভাগের কথা বলতে। ফোনে পাওয়া যায়নি কাউকে। অবশেষে

দুর্ঘটনা বিষয় ও অরক্ষিত রেল ক্রসিং এর বিষয়ে জানতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আর এন বি) চিফ কমান্ডেন্ট পূর্ব জহিরুল ইসলাম, চিফ অপারেটিং সুপারেনটেন্ড মোঃ শহিদুল ইসলাম, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস কে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করে হলে এ কর্মকর্তারাও কল রিসিভ করেননি। এখন প্রশ্ন হল দেশের চলমান পরিস্থিতি হরতাল অবরোধের সময় যদি সরকারি কর্মকর্তারা ফোন রিসিভ না করেন তাহলে এটা কি দায়িত্বে অবহেলা নয় ?

ট্রেন যাত্রীদের সদা সর্বদাই সতর্ক থাকতে হয়। কোনভাবেই ট্রেন থেকে নামার দরকার নাই কোন স্টেশনে ক্রসিং থাকলেও। একটি অসাবধানতা ই সারা জীবনের যন্ত্রণা। দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। অল্প একটি অসাবধানতার কারণে মাজেদ নামের ট্রেন যাত্রী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকার হাসপাতালে।

জীবন সঙ্গীকে নিয়ে আমেরিকার পথ চলার বিষয়টি ও অনিশ্চয়তায়।

ঊঠতি বয়সি যুবক মাজেদ পেশায় একজন শিক্ষক। তার সহধর্মিনী অবস্থান করছেন আমেরিকায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে মাজেদ । তার বড় ভাই মোস্তাক ইউপি নির্বাচন করে থাকেন জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন থেকে। মাজেদের ভিসা হয়েছে আমেরিকার। ঢাকা এম্বাসিতে গিয়েছিলেন সে ভিসা আনতে। সাথে ছিলেন সহধর্মিনীর বড় বোন এলিন বেগম ও তার স্বামী। গেল ৫নভেম্বর ঢাকা থেকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস এ যাত্রী ছিল সে। রাত দশটার দিকে বিমানবন্দর ছেড়ে টঙ্গীত স্টেশনের কাছাকাছি আসার পর মধুমতি রেল ক্রসিং এ ঘটেএক দুর্ঘটনা। এতে বাম হাতের কব্জি কর্তন হয়ে যায়।

জানাযায়, গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্রাকের সাথে ধাক্কায় ঊপবন ট্রেনের এক যাত্রীর হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাত্রীর নাম মাজেদ খান (৩৫)।তিনি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। এলাকার এরালীগুল গ্রামের সমাজসেবক মোস্তাক খানের ছোট ভাইও ইসাক খানের ছেলে।

মাজেদ পেশায়একজন শিক্ষক। তিনি জুড়ীর হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক।

কব্জি করতনের ঘটনায় জড়িত ট্রাক চালক আনোয়ার কে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, রোববার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি মধুমিতা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ের পাশে থাকা একটি বালুভর্তি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে থাকা ট্রেন যাত্রী মাজেদের বাম হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে আহত মাজেদকে নামালে, স্থানীয়রা দ্রুত তাকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে পাঠায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন উন্নত চিকিৎসার জন্য । বর্তমানে মাজেদ uttara lake view specialized hospital ( উত্তরা লেইক ভিঊ স্পেশালাইজড হসপিটাল) এ চিকিৎসাধীন আছেন।

মাজেদ মোঠ ফোনে জানান, হাতের কব্জি জোড়া লাগে নি। অপারেশন শেষ হয়েছে। সুস্থ হতে ৩- ৪ দিন লাগবে।

আমেরিকার ভিসার কোন সমস্যা হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বুঝতে পারছেন না বলে নিঃশ্বাস ফেলেন।

এ বিষয়ে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি ট্রাক রেললাইনের ওপর উঠে পড়লে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয় ট্রেন। এতে একজন যাত্রী গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ বিষয়টি দেখছে।

এটা রেলওয়ের অনুমতি বিহীন রেল ক্রসিং । স্থানীয় লোকজন গাড়ি নেওয়ার জন্য এটা সৃষ্টি করেছে।

টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক ছোটন শর্মা বলেন, ঘটনা ঠিক আছে। আমি আমার মাকে নিয়ে চট্টগ্রামে আছি। ইনি স্ট্রোক করেছেন । এটা কমলাপুর রেলওয়ে থানার আওতাধীন ওসি স্যারের সাথে কথা বললে ভাল হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমদ বিশ্বাস জানান, রেলওয়ের আনঅতরাইজ(অনুমতি বিহীন) লেভেল ক্রসিং গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মধুমতি রেলওয়ে ক্রসিং। স্থানীয়রা রেলের উপর দিয়ে গাড়ি নেওয়ার জন্য এটি সৃষ্টি করেছে । এর আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনার জন্য উপরে চিঠি দিতেছি।

তিনি জানান মাজেদ এর কব্জি কর্তন ঘটনায় শুনেছি আপস মীমাংসা চলছে। পক্ষদ্বয়ের মধ্যে। রেল কর্তৃপক্ষআপোষ করলে আমি আপোষ নামা পাব।

উল্লেখ্য, মধুমতি রেল ক্রসিংসহ অরক্ষিত রেল ক্রসিং গুলোতে গেইট ম্যান দেয়া এখন সময়ের দাবি। স্থানীয়রা চায় দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ে তদন্ত কমিটি।

Post a Comment

Previous Post Next Post