বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও খাদ্য সংকট প্রকট

ইমাদ উদ দীনঃ চাল নেই, চুলাও নেই। নেই খাদ্য সামগ্রী ও রান্না করার উপকরণ। ৪-৫ দিন থেকে শুকনো খাবারই ভরসা। তাও অপর্যাপ্ত। পরিবার স্বজনদের নিয়ে বানভাসিরা এখন চরম অসহায়।



চোখের সামনে ডুবে গেছে সব। বসতঘর,রান্নাঘর,টিবওয়েল আর সেই সাথে চাষাবাদের ক্ষেতও। একটু একটু করে পানি বেড়ে এখন সবই বানের দখলে। ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি অধিকাংশ মানুষ। নিজ বসত ভিটায় থাকার সর্বাত্মক চেষ্ঠা করেও কাজ হয়নি। সবকিছুই থাকারপরও অনেকেই অনেকটা শুন্য হাতে ছাড়তে হয়েছে নিজের প্রিয় বসত ভিটা। বানের পানি তাদের সব কেড়ে নিয়ে এখন নি:স্ব করে দিয়েছে। জেলার হাওর ও নদী তীরের বন্যার্তরা ঠাঁই নিয়েছেন বিচ্ছিন্ন ভাবে নানা জায়গায়। কেউবা আশ্রয় কেন্দ্রে। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে। আবার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় বাজারের সেড ঘরে কিংবা সুবিধাজনক উচুস্থানে অথবা আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে। নিজ বাড়ি থেকে আশ্রয় কেন্দ্র দূর হওয়াতে অনেকেই ওখানে না এসে বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। আবার এখনো কিছু মানুষ ঘরে মাচাং বেধেঁ কোনো রকম ঠিকে আছেন।



যে যেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন সবখানেই চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নিজেদের সুবিধানুযায়ী বন্যার কবল থেকে কোন রকম প্রাণ বাঁচাতে পারলেও এখন চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থানে বানভাসি আশ্রিতরা। খাবার সংকটে যেমন শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তেমনি বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় অন্তহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে নীচ তলায় টিবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকায় ইতিমধ্যে তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিকল্পিত ভাবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তা নির্মিত হলে আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে কোনো বছরই বন্যা দূর্গত এই বাড়তি দূর্ভোগে পড়তেন না। এমন বক্তব্য দূভোগগ্রস্থদের।



নদী ও হাওর তীরবর্তী বন্যা কবলিতরা বাড়ি ছেড়ে চলে আসার সময় সঙ্গী হয়েছে তাদের পালিত গরু,ছাগল ও মহিষ। এই গৃহপালিত গবাদি পশুগুলো নিয়েও তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। এই অবলা প্রাণিদেরকেও তাদের সাথে রাখতে হচ্ছে খাওয়াতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে সবই তলিয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসি দূর্ভোগগ্রস্থরা বলছেন ২০০৪ ও ২০১৮ সালের রাক্ষুসে বন্যার চাইতে আরও ক্ষিপ্ত ও আগ্রাসী এবারকার বন্যা। চোখের সামনে দ্রুত তাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। এখন তারা নি:স্ব। কি খাবেন আর কিভাবে নিজের পরিবারের সদস্যদের বাঁচাবেন এখন এমন দুশ্চিন্তায় কাটছে রাতদিন। তারা জানালেন এপর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে তাদের হাতে পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ সামগ্রী। যে কয়টিতে ত্রাণ পৌঁচেছে তাতে শুধু অল্প পরিমান শুকনো খাবার। বন্যায় হাকালুকি হাওরতীরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ভূকশিমইল ইউনিয়নের বানভাসি অনেকেই জানালেন তারা অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সাথে স্যানিটেশন ও খাবার সংকট চরমে। ওই ইউনিয়নের সাদিপুর ঘাটের বাজারের সেডে আশ্রয় নেওয়া অর্ধশতাধিক পরিবারের সদস্যরা জানালেন তারা বিশুদ্ধ খাবার পানি,স্যানিটেশন ও খাবার সংকট ভোগছেন। স্যাতস্যাতে সেডের ঝুপড়িতে গাদাগাদি করে কোনো রকম প্রাণ বাঁচাচ্ছেন দুই শতাধিক মানুষ। একই অবস্থা ১৭৬ মীরশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে। ওখানে আশ্রয় নেওয়া মানিক মিয়া,দুদু মিয়া,সানাফর মিয়াসহ অনেকেই জানালেন এপর্যন্ত ওখানে ১৫ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলটির ২য় তলায় আশ্রয় নিলেও নীচতলা পানির দখলে। টিবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নীচ তলায়। তাই তারা ওখানে শুধু নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তা ছাড়া আরও কিছুই পাচ্ছেন না। একই অবস্থা জেলার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের জামিয়া ইসলামিয়া হামরকোনা মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্র, ব্রাহ্মণগাঁও সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় ও আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য আশ্রয় কেন্দ্র থাকা ও বন্যাদূর্গতদের। জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত। এপর্যন্ত ১০১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেই সাথে প্রায় দেড় হাজার মহিষ,গরু ও ছাগল আশ্রয় পেয়েছে। এ পর্যন্ত ২১০ মেট্রিক টন চাল, ১৭ শ প্যাকেট শুকনো খাবার ১৮ লক্ষ ২০ হাজার বিতরণ করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন তার ইউনিয়নের ৯৫ ভাগ ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রসহ নানা স্থানে আশ্রয় নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা বাড়তে বিনিত আহবান জানান। 

Post a Comment

Previous Post Next Post