এদের অন্তরে এখনো পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে : শেখ হাসিনা



নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাক হানাদার বাহিনী যে অপপ্রচার করত, অত্যাচার করত, পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাই করেছে। তার অনুসারী বিএনপির এক নেতা পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিতে চাইলেন। আমি বললাম দেন, দিলে বোঝা যাবে তাদের মানসিকতা।

তিনি বলেন, তার বক্তৃতা থেকে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করে না। এরা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। এদের অন্তরে এখনো ওই পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে। পাকিস্তানের গোলামিটাই তারা পছন্দ করে। হারুন সাহেব, বিএনপির যে এমপি, হৃদয়ে যে পেয়ারে পাকিস্তান, তার বক্তৃতায় সেটাই কিন্তু প্রকাশ হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ অনুযায়ী একটি সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে  প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন,  পঁচাত্তরের পর মনে হতো বাংলাদেশটা কি স্বাধীন? এই স্বাধীনতা সংগ্রাম ৪৮ সাল থেকেই জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। তিনি ধাপে ধাপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। আজ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমার এখনো মনে আছে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছয় দফা দিলেন, ছয় দফা দিয়ে তিনি যখন সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান, সেই সময়ে শেখ ফজলুল হক মনিকে নির্দেশ দিলেন যে এই স্লোগানটা ছাত্রলীগের মাধ্যমে মাঠে নিয়ে যাও। 

তিনি বলেন, আমাদের পতাকা, জাতির পিতা বললেন, আমাদের পতাকা হবে সুবজের মাঝে লাল। ছাত্রলীগ ছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটা অগ্রসেনা দল। কাজেই যেটা মাঠে নেওয়া হবে সেটা ছাত্রলীগের মাধ্যমেই নেওয়া হতো। সেখানেও কিন্তু নির্দেশটা ছিল এভাবে আমাদের পতাকাটা তৈরি হবে। পাশাপাশি আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি— এটা কিন্তু আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বাজানো হয়েছে। কলিম শরাফী প্রখ্যাত গায়ক বন্ধু মানুষ ছিলেন আমার বাবার। যেকোনো অনুষ্ঠানে কলিম শরাফীকে বলতেন কলিম এই গানটা কর।  তার এ চিন্তাটা ছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশে এটাই হবে আমাদের জাতীয়  সংগীত। এই কথাগুলো কিন্তু সবসময় আমরা জানতাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয়দফা দেওয়ার পর আমরা পরিবারের সদস্যরা জানতাম। তিনি ছয়টা আঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের বলতেন আসলে আমাদের মূল লক্ষ্য এটা (একটি আঙ্গুল দেখাতেন)। আমাদের কোনো কোনো সদস্য তার পরিচিত নাম বলেছে। কিন্তু আসল নিউক্লিয়াস ফর্ম করার যে সিদ্ধান্ত সেটা ওই ৬১ সালে ছাত্রনেতা শেখ মনিকেই তিনি (বঙ্গবন্ধু) নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের আমীর হোসেন আমুসহ অনেক নেতারা তখন ছিলেন। যাদের দিয়ে এটা করা হয়, সঙ্গে অন্যরাও ছিল। কিন্তু কথাগুলো সব সময় মনি ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছাত্রলীগের কাছে পৌঁছাতেন। আমরা নিজেরা সাক্ষী। কারণ আমাদের বাড়িতে কোনো কিছু রাখা-ঢাকা ছিলো না, আমার বাবা সব সময় আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন। আমাদের কিন্তু সেই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে আমরা কোনো সময় সেই কথা প্রকাশ করব না।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়ার বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার একটা খাতা ছিলো। একটা সুবিধা ছিল ক্যান্টনমেন্টে সেখানে কোনো সরকারি লোকজন বসে থাকতো না। কারণ পাকিস্তান আর্মির লোক যে গেটে থাকতো ও তো আর বাংলা বুঝত না। আব্বা সবসময় আমাদের কতগুলো নির্দেশ দিতেন। কী কী স্লোগান হবে,  কী কী দফা হবে, কীভাবে কাজ করতে হবে, ছাত্রলীগকে কী করতে হবে- আমি সেই নির্দেশনাগুলি নিয়ে আসতাম। আজকের জহুরুল হক হল, তখনকার ইকবাল হল। এই ইকবাল হলের একটা পুকুর আছে পুকুরের পাড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। আমরা ঘরের মধ্যে কথা বলতাম না, ওই মাঠের মধ্যে যেয়ে তখন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের নির্দেশনাগুলো দিয়ে দিতাম।

শেখ হাসিনা বলেন, এই যে ছাত্রলীগকে দিয়ে সমস্ত জিনিসগুলো মাঠে নেওয়া, যে নামগুলো এসেছে সবাই তখন সক্রিয় ছিল। সিরাজুল আলম খানের যে স্লোগান সে স্লোগান দেওয়ার নির্দেশটা কিন্তু ওই স্টেজে বসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, স্লোগান ধর। এই স্লোগান দেয়। তারপরে কিন্তু সিরাজুল আলম খান এই স্লোগান ধরেছিল- এটাও বাস্তব কথা। ইতিহাস বললে সবটুকু বলা ভালো। যাদের চেনেন তাদের কথা বলবেন এটা ঠিক। কিন্তু এই কথাগুলো জানার কথা না যে, মনি ভাইকে দিয়েই এ তথ্যগুলো তিনি (বঙ্গবন্ধু) পাঠিয়েছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শেষ  হয় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। এরপর থেকে এ স্লোগান হয়ে যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। তাদের মুখে জয় বাংলা স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগানটাই একটা আলাদা উদ্দীপনা সৃষ্টি করত। আমরা যে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলাম আমরাও কিন্তু সে সময় আমরাও কিন্তু ওই জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। পঁচাত্তরের পর এ স্লোগান সম্পূর্ণ বন্ধ, নিষিদ্ধ। আমার ছাত্রলীগের, আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মী এই স্লোগান দিতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। এই স্লোগান দিলেই নানা ধরণের কথা বলত। অনেক অপপ্রচার হতো।

তিনি বলেন, সংবিধানে খুনিদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছিল। সেই ভোটাধিকার আবার সংবিধান মার্শাল অডিন্যান্সের মাধ্যমে সঙ্গিনের খোঁচায় পরিবর্তন করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, যারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের পর্যন্ত বের করা হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারী ইনডেমিনিটি দিয়ে তাদেরকে বিচারের হাত থেকে একেবারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনডেমিনিটি অডিন্যান্স যখন আমরা প্রত্যাহার করলাম, যখন মামলা করতে গেলাম আমি বললাম জিয়াউর রহমানের নামও থাকতে হবে। কারণ জিয়াউর রহমানই আসল খুনি। আমাকে এটাই বলা হয়েছিল যেহেতু সে এখন মৃত তাকে আসামি করে কোনো লাভ নেই। - ঢাকা পোস্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post