ভুতে ধরা নয়, এক্যুট সাইকোসিস: ডা. সাঈদ এনাম



ডা. সাঈদ এনাম: সুমনা বয়স আট বছর ৩ দিন যাবৎ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ৩ দিন আগে গভীর রাতে কে যেনো সুমিদের ঘরের জানালায় ঠক ঠক শব্দ করে। সুমনা ও তার ছোট খালা ঘুম থেকে উঠে যায়। এরপর আবারও জানালায় প্রচন্ড একটা শব্দ হয়। সুমনা সেই শব্দে ভয় পেয়ে খেই হারিয়ে বিছানা থেকে পড়ে যায়। 

সারারাত তারা দুজনে ঘুমোয়নি। ভয়ে দুজনে থর থর কাঁপতে থাকে। 

ঘটনার পরদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩ দিন সুমনার চোখে ঘুম নেই। সাথে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে। পরিচিত, অপরিচিত যে কাউকেই দেখুক ভয়ে চিৎকার দিয়ে লুকোয়। উল্টোপাল্টা কথা বলে। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে আৎকে উঠে।

সবাই বলেছে মোল্লা, কবিরাজ দেখাও। এগুলো খারাপ বাতাস লাগার লক্ষণ।

তারা মোল্লা, কবিরাজ দেখিয়েছেন। কবিরাজ বলেছে সুমনাকে ভুতে ধরেছে। তেল পড়া, সাথে গলা ও মাথায় তাবিজ দিয়েছে সে। 

সুমনার কোন উপশম নেই। অস্বাভাবিক আচরণ বেড়েই চলেছে।

কবিরাজ কে আজ আবার খবর দেওয়া হলো। সে সকালে দলবল নিয়ে ফের সুমনাদের বাড়ি এসেছে।

প্রথমে বাড়ি চারিদিকে আগুনের ধুয়ো দিয়েছে তারা। সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার ধুয়ো ছিটানোর মতো। চার কোনায় চারটি তাবিজ দিয়ে 'বাড়ি বন্ধ' করেছে। এ বাড়িতে নাকি ভুত স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। এ বাড়িতে অতীতে আরো দুজনকে ভুতে ধরেছিলো, এটা কবিরাজ ও তার দলবল জ্বিনের মাধ্যমে খবর পেয়েছে।

কবিরাজ এর এমন অভিযোগ  সত্যি! এর আগে একবার সুমনার ফুফু এবং দাদারও এমন হয়েছিলো। তারা অনেক দিন এমন রোগে ভুগেছিলেন। 

কবিরাজের এমন অভিযোগের সত্যতায় তার প্রতি সবার বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়।

কিন্তু তাদের এ বিশ্বাসে ছাই দিলেন সুমনাদের পাশের গ্রামে এক ভদ্রমহিলা। তিনি আজ বিকেলে এসব ঘটনা শুনেন এবং শুনেই ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। ভদ্রমহিলা শিক্ষিত, আধুনিক পরিবারের। গ্রামে সব মহিলার কাছে যথেষ্ট সম্মানিত। 

পুরো কাহিনী শুনে তিনি বললেন ভুত, পেত্নী বা খারাপ বাতাস এসব সত্য নয়। এটা মুলতঃ সুমনার মানসিক সমস্যা এবং সম্ভবত বংশগত। কারন তার ফুফুর এবং দাদার এমন হয়েছিলো। 

ভুতের আছর বা বাড়ীতে ভুতের 'স্থায়ী আসন' এগুলো পুরোটাই  কুসংস্কার, কপটতা, ভন্ডামী উক্তি। সহজ সরল মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেবার কৌশল। 

ভদ্রমহিলা জানালেন তার এক আত্মীয়ের এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। তারাও না বুঝে কবিরাজ, সাধু সন্যাসী দেখিয়েছিলেন, প্রতারিত হয়েছিলেন। পরে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছিলেন। 

সেই আত্মীয়া মেয়েটি এক্যুট সাইকোসিস নামে ব্রেইনের একটা রোগ হয়েছিলো। অল্প ক'দিনের চিকিৎসায় সেই মেয়ে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যায়। সে অত্যন্ত মেধাবী, এখন ভার্সিটিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ পড়ছে। 

ভদ্র মহিলা সুমনার গলা ও মাথা থেকে কবিরাজের দেয়া বিভিন্ন গাছের জড়, তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজেই সুমনাকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বারে চলে এলেন। (সুমনা ছদ্মনাম)

Post a Comment

Previous Post Next Post