'আজ প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ মোঃ ইউসুফ আলী) স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী'

  


আহসানুজ্জামান রাসেলঃ কুলাউড়া কলেজ থেকে বের হওয়া হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীর কাছে তিনি প্রিন্সিপাল স্যার নামেই পরিচিত, যেমনটি গনি স্যার ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার নামে। বলছিলাম কুলাউড়া কলেজের সাবেক সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মোঃ ইউসুফ আলী (এম এ ট্রিপল, এলএল বি, বিটি, ডিপ-ইন-ইটি) স্যারের কথা। ১৯৬৯ সালে কলেজের প্রতিষ্টাকালীন সময় থেকে তিন দশকের বেশী সময় স্যার কুলাউড়া কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। আজ ১২ ই এপ্রিল স্যারের মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৪ সালের আজকের এই দিনে স্যার সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছিলেন।

১৯৯৪ সাল। সদ্য এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয়েছি কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজে। সহপাঠী বন্ধু Sayem Ahmed এর সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে প্রথম দিনেই পরিচয় হয় সায়েমের বাবা প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে। স্যার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে দিলেন। সায়েমকে সবসময় ক্ষেপাতাম তুই প্রিন্সিপালের ছেলে বলে এক নাম্বার রোলটা বাগিয়ে নিয়েছিস। (বন্ধু Niparকেও ক্ষেপাতাম কলেজের কাছেই বাড়ী বলে দুই নাম্বার রোলটা বাগিয়ে নেয়ার জন্য)। এমনও ঘটনা আছে কলেজে দুই রাজনৈতিক দলের মারামারি শুরু হলে আমি আর সায়েম স্যারের রুমে আশ্রয় নিয়েছি।

যাইহোক ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ দুই বছরের কলেজ জীবনে স্যারের সান্নিধ্য খুব কমই পেয়েছি আর যতটুকু পেয়েছি তা সায়েমের কল্যাণে। ১৯৯৬ সালে কুলাউড়া কলেজের ইতিহাসে এইএসসিতে ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ের (১,৪০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে আমরা মাত্র ৩৯ জন পাশ করেছিলাম) মধ্যেও একমাত্র প্রথম বিভাগ পাওয়ার পর স্যার আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন জানি ঐ সময় স্যারের সাথে দেখা করা হয়নি যে আফসোসটা এখনও আমাকে পোড়ায়। 

স্যারের পৈত্রিক নিবাস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনুসার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে। উনার বাবা মা সহ চৌদ্দ পুরুষ শায়িত আছেন সেখানে। কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে স্যার কুলাউড়ায় আসেন। একটি কলেজকে দাঁড় করানো যে কতো শ্রমসাধ্য ছিলো তা আপনাদের সবারই জানা। তিন দশকেরও বেশি সময়  কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সবসময়েই, দল-মতের উর্দ্ধে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন। কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছিলেন। তাই বারবার ভালো সুযোগ আসা সত্ত্বেও অন্য কোন পেশায় যাননি। 

স্যারের সহধর্মিণী মিসেস সমীরুন খাতুন, তাঁর পুরো কর্মজীবন কুলাউড়া গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেব অবসর নেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। ম্যাডামের বাবার বাড়ীও শ্রীরামপুর,পতনুসার, কমলগঞ্জ।  

কুলাউড়ায় স্যারের বাড়ী ছিলো কুলাউড়া ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে। স্বাধীনতার কিছুদিন পর এ বাড়ী কেনা হয়। আর, মমরেজপুর মসজিদ ও মোকাম সংলগ্ন কবরস্থানে স্যার চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তিনি দীর্ঘদিন এ মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। 

স্যারের পাঁচ ছেলেমেয়ের চারজনই পড়াশোনা করেন কুলাউড়া কলেজে। এটা থেকে প্রমাণিত হয় স্যার কলেজকে কতটা ভালোবাসতেন। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে স্যারের ছেলে মেয়েদের পরিচয় :

১. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শামীম হায়দার, এমবিবিএস, এফসিপিএস। বর্তমানে এডভাইজার স্পেশিয়েলিস্ট (প্রফেসর) ইন মেডিসিন হিসেবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকায় কর্মরত। সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস থেকে মেডিসিনে এফসিপিএস ডিগ্রী লাভ করেন। অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স, নয়াদিল্লী থকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। ইতোপূর্বে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহকারী ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন। 

২. সেলিনা বেগম, বাংলা সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ও এমএ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এমএ তে প্রথম স্থান অধিকারি। জুড়ি টিএন খানম একাডেমী ডিগ্রী কলেজে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত এবং সহকারী অধ্যাপিকা অবস্থায় ২০০৮ সালে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন করেন। বর্তমানে কোয়ালিফাইড শিক্ষক হিসেবে যুক্তরাজ্যে কর্মরত। 

৩. শাহিন আহমেদ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এএইচএসসি এবং ইংরেজী সাহিত্যে বিএ (সম্মান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এমএ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী লাভ করেন। কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। বর্তমানে সপরিবারে কানাডায় অবস্থানরত।

৪. রেজিনা বেগম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে দি এইডেড হাইস্কুল, সিলেট এ সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। 

৫. সায়েম আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস ডিগ্রী এবং এরপর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। বিসিএস (পররাষ্ট্র বিষয়ক) ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং বর্তমানে বাংলাদেশ হাই কমিশন কেনিয়ায় কর্মরত।

কুলাউড়া সরকারি কলেজের স্যারের সাবেক ছাত্র ছাত্রীদের চরম আগ্রহের প্রেক্ষিতে আমি স্যারের সম্পর্কে কিছু তথ্য তোলে ধরার চেষ্টা করলাম। আজ স্যারের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্যারকে যেনো জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post