নিউজ ডেস্ক: সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে পিটিয়ে হত্যার আলামত নষ্টকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান ছয় মাসেও গ্রেফতার হয়নি। বহুল আলোচিত এ মামলায় তাকে গ্রেফতার না করেই তদন্ত অনেকটা গুটিয়ে আনা হয়েছিল।
অনেকটা চূড়ান্ত করা হয়েছিল মামলার চার্জশিটও। চলতি সপ্তাহে চার্জশিট দেওয়ার আভাসও দিয়েছিল পিবিআই। শেষ পর্যন্ত এখনই চার্জশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে তদন্তে নিয়োজিত সংস্থা।
পলাতক নোমানের সহযোগী এসআই হাসান আলীকে গ্রেফতার ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে।
তদন্তের জন্য প্রথম দফা সময় চাওয়ার পর এবার দ্বিতীয় দফায় সময় চাওয়া হয়েছে। পিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার দ্বিতীয় দফায় তদন্তের জন্য আরও সময় দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান।
তিনি জানান, তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। চার্জশিটও প্রায় প্রস্তুত। তবে আরেকটু সময় প্রয়োজন। তাই চার্জশিট দিতে ক’দিন সময় লাগবে। প্রথম দফা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তদন্তের জন্য ৩০ কার্যদিবসের সময় দিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যেও তদন্ত ও চার্জশিটের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় রোববার আবার ৩০ কার্যদিবসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন জানানো হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আবার সময় বাড়িয়েছেন। তবে কতদিন, তা আদালতের আদেশের কপি হাতে না পাওয়ায় জানাতে পারেননি তিনি।
বহুল আলোচিত এ মামলার তদন্ত ও তদারকিতে নিয়োজিত নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রমতে, রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ছয় পুলিশকে।
তারা হচ্ছেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। কারাগারে থাকা এ ছয় পুলিশ সদস্যকে চার্জশিটেও রাখা হচ্ছে।
তবে ঘটনার আলামত নষ্টকারী কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান ছয় মাসেও গ্রেফতার না হওয়ায় তাকে চার্জশিটভুক্ত করা হবে কি-না এ নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
রায়হানকে পিটিয়ে হত্যার আলামত ধ্বংস করতে পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন করেছিলেন নোমান। এছাড়া প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন।
মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে গেলেও নোমানকে গ্রেফতার করা যায়নি গত ছয় মাসে। এ অবস্থায় নোমানের সহযোগী এসআই হাসান আলীকে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে হাসান আলী জানায়, নগরীর গ্যালারিয়া শপিং সিটির একটি দোকান থেকে ১২শ’ টাকায় ৫শ’ গিগাবাইটের হার্ডডিস্ক কিনে নির্যাতন-হত্যার ভিডিও রেকর্ড হওয়া ফাঁড়ির হার্ডডিস্কটি বদলে ফেলেছিলেন নোমান।
ঘটনার আগে-পরে ২৪ ঘণ্টায় হাসান ও নোমানের মধ্যে কমপক্ষে ৫৯ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। হাসান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও প্রথমে গোপন করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ও পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জানান, হাসানকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রায়হান হত্যার পর ২১ অক্টোবর এসআই হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে মহানগর পুলিশ। এরপর থেকে তাকে নগর পুলিশ লাইন্সে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। হাসানকে গ্রেফতার ও তার জবানবন্দি নেওয়ার পর তদন্তে নতুন মোড় নেয়।
গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে টাকা আদায়ের লক্ষ্যে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে বর্বর নির্যাতন চালানো হয় যুবক রায়হান আহমদের ওপর। এসআই আকবরের নেতৃত্বে তার হাতের নখ তুলে নেওয়া হয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমন বর্বর নির্যাতনে মারা যান রায়হান।
মৃত্যুর পর ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালায় বন্দর ফাঁড়ির পুলিশ। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও আদালতে আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে টাকার জন্য ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।