পারিশ্রমিক ছাড়াই ১০ বছর ধরে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন রাজন



নিউজ ডেস্ক: ট্রেন কখন স্টেশনে আসবে, কোথায় আছে, ট্রেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য স্বেচ্ছায় মাইকিং করে যাত্রীদের জানান দেন মো.রাজন। পূর্বাঞ্চল রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ জংশন স্টেশনে দীর্ঘ বছর ধরে প্লাটফর্মে স্টেশন মাষ্টার ও টিসি না থাকায় যাত্রীদের ট্রেন আসার তথ্য ও মাইকিং করে ঘোষণা দেয়ার কাজটি বিনা পারিশ্রমিকে করছেন তিনি।

প্রতিদিন তিনি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পযর্ন্ত বিরামহীন ভাবে গত ১০ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন রাজন। তবে সেচ্ছায় বিরামহীনভাবে ট্রেন আসা যাওয়া তথ্য মাইকিং করে যাত্রীদের দিতে পেরে তিনি খুবই খুশি।

দেশের পূর্বাঞ্চল রেলপথের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন আখাউড়া দিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট-লাকসাম-নোয়াখালী-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করেন। এ স্টেশনে অন্তত ২০টি আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রবিরতি। ওই সব ট্রেনগুলোর মধ্যে মহানগর গোধূলী, প্রভাতি, মহানগর এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, বিজয় এক্সপ্রেস,পাহাড়িকা, উদয়ন, উপকুল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করছে। সে সঙ্গে রয়েছে মেইল ও লোকাল ট্রেন। স্টেশন মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা ট্রেন আসার খবর জানতে না পাড়ায় ভোগান্তির শিকার হয়।

রাজন পৌর শহরের মসজিদ পাড়া এলাকার নাছির মিয়ার ছেলে। স্টেশন প্লাটফর্মে তার একটি ক্ষুদ্র দোকান রয়েছে। ব্যবসার ফাঁকে নিয়মিত ভাবে তিনি স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রীদের ট্রেন আসার খবরাখবর জানিয়ে আসছেন।

রাজন বলেন, প্লাটফরম স্টেশন মাস্টারের কক্ষ বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ট্রেন আসার খবর পেতে বিভিন্ন স্থানে ছুটে যায়। কখন ট্রেন আসবে কিংবা ট্রেন কোথায় রয়েছে তারা কিছুই জানতে পারছে না। যাত্রীদের সুবিধার্থে নিজের সামান্য ক্ষতি হলেও এ কাজটি স্বেচ্ছায় করি। এ জন্য তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক পায়নি বলে জানান।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে স্টেশনে তিনি যে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন। তবে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। পরিবার নিয়ে চলাচল করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে তার।

রাজন বলেন, অনেকদিন আগে রেলওয়েতে চাকরির জন্য একটি আবেদন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মঞ্জুর করলে পরিবারের দু:খ কষ্ট অনেকটা দূর হবে বলে জানায়।

আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন সুপার মো. কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ জংশন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার, টি.টি.ই, টিসিসহ বিভিন্ন পদে জনবল অনেক সংকট রয়েছে। স্টেশনে টিসি (টিকিট চেকার) মাইকিং করার কথা। কিন্তু বর্তমানে মাত্র একজন টিসি আছে। অনেক সময় আবার তাকে ট্রেনের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাজন দীর্ঘ দিন ধরেই স্বেচ্ছাশ্রমে যাত্রীদের তথ্যসেবা দিয়ে আসছেন। সে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এখন পযর্ন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মঞ্জুর করেনি।

Post a Comment

Previous Post Next Post