মস্তফা
উদ্দিন: মৃত্যুর পর প্রচার করা হয়েছিল কলেজ ছাত্র সাইফুর সাপের ছোবলে মারা
গেছেন। ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে
শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ
ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত সোমবার (২৬
অক্টোবর) থানায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এসেছে। গত ৩১ জুলাই মৌলভীবাজারের
বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের বাড়ির কক্ষ থেকে সাইফুর
রহমানের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সাইফুর রহমান বর্ণি ইউনিয়নের সৎপুর
গ্রামের মো.আব্দুল আহাদের ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বর্ণি
ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের মো. আনছার আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২০), জবলু
হোসেন (২৪) ও বাবুল হোসেন (২৬)। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে
তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয়
সূত্রে জানা গেছে, সাইফুর কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিপ্লোমা ইন
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৩০ জুলাই প্রায় ২ বছর পর
তিনি সিলেট থেকে বাড়ি আসেন। রাতের খাবার খেয়ে পাশের গ্রামের মামা বাড়িতে
যান। মামার বাড়ি থাকা অবস্থায় এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন সাইফুরকে ফোন
করে জরুরী কাজের কথা বলে দেখা করতে বলেন। কামালের ফোন ফেয়ে সাইফুর তার সাথে
দেখা করতে যান। রাতে আর মামার বাড়ি ফেরেননি। পরদিন স্বজনরা তার সাথে
(সাইফুরের সাথে) যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তার ফোন বন্ধ পান। বিকেল সাড়ে ৪টার
দিকে পাশের ঘরের বাসিন্দা জয়নাল সাইফুরের বাবাকে ফোন করে জানায় নতুন বাড়ির
একটি কক্ষের মেঝেতে সাইফুরের মৃতদেহ পড়ে আছে। এর আগে সকালে জয়নাল আরেক বার
সাইফুরের বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন, ওই কক্ষে তার (সাইফুরের) ছোট ভাই এমদাদ
ঘুমিয়ে আছে। এলাকায় মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রচার করা হয় সাইফুর
সাপের কামড়ে মারা গেছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা ঘরে ঢুকে দেখেন
সাইফুর রহমানের নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে ওইদিন
(৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় পুলিশ সেখানে যায়। সে সময় তার কোমরের পাশে সাপে কাটার
মতো কয়েকটি দাগ দেখা যায়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়নি। তার শরীরের
কিছু স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানার পুলিশ ২
আগস্ট হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে ওসমানী
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে
গ্রামের বাড়িতে জানাজা ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়। এদিকে ঘটনার প্রায় ৩
মাস পর গত ২৬ অক্টোবর (সোমবার) হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বড়লেখা
থানা পুলিশের কাছে পৌঁছায়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সাইফুরকে শ্বাসরোধে হত্যা
করার বিষয়টি বলা হয়েছে। এদিন (সোমবার) নিহত সাইফুরের ছোট ভাই বাদী হয়ে
অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দয়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার
রাতেই পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কামাল হোসেন (২০), জবলু হোসেন (২৪) ও
বাবুল হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার বাদী নিহতের ভাই মো.
এমদাদুর রহমান বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এরপর হত্যার
ঘটনা আড়াল করতে জয়নাল গংরা প্রথম থেকেই সাপের কাটায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে
বলে প্রচার করেছিল। কিন্তু তাদের এমন কথায় প্রথমেই আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর
ভাইকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভাইয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক
জানিয়েছেন সাপে কাটেনি। সুরতহাল প্রতিবেদনেও জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। ময়নাতদন্ত প্রেতিবেদন আসার পর থানায়
হত্যা মামলা করেছি। ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
থানার
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধায়
বলেন,সোমবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থানায় আসে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সাইফুরকে
শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। এরপর নিহত সাইফুর রহমানের ভাই
মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা
হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে।