প্রথম শ্রেণির কুলাউড়া পৌরসভার ভাঙাচোরা সড়কে দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী

 


বিশেষ প্রতিনিধি: ভাঙাচোরা সড়ক আর সামান্য বৃষ্টিতে জমে যাওয়া কাদাপানিতে দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে প্রথম শ্রেণির কুলাউড়া পৌরসভার বাসিন্দাদের।  পৌর শহরে দক্ষিণবাজারের সড়কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা থাকলেও সেটি সংস্কারে নেই পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যত উদ্যোগ। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি বরাদ্দ না থাকায় এটি সংস্কার করা যাচ্ছেনা। পৌর এলাকার অন্যান্য সড়কগুলোর সংস্কারের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে সমন্বয় করে বরাদ্দ এনে দক্ষিণবাজার সড়কটি সংস্কার করা হবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ব্যস্ততম দক্ষিণবাজার সড়কের প্রায় ৪শ’ মিটার খানাখন্দে ভরপুর। সড়কটির পাশে অবস্থিত পৌরশহরের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী ও খুচরা কাঁচা পণ্য, মাছ বাজার অবস্থিত এবং অন্যপাশে বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিবাড়ি মন্দির ও নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে ভরপুর হয়ে যায়। এ সড়কটি দিয়ে দক্ষিণ বাজার, মাগুরা আবাসিক এলাকা ছাড়াও উপজেলার ভূকশিমইল ও কাদিপুর ইউনিয়নের মানুষ পৌরশহরে যাতায়াত করেন। ভাঙাচোরা আর জমে থাকা কাদাপানি দিয়ে চলাচল করতে পথচারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়াও সড়কটির ওপর অবৈধ টমটম স্ট্যান্ড ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজটে পথচারী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের মাত্রা আরো প্রকট হয়ে ওঠে।

৩, ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত পূর্ব মাগুরা থেকে টিটিডিসি এরিয়া পর্যন্ত সড়কটি ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরপুর।  ৪নং ওয়ার্ডের মাগুরা (আখড়া বাড়ি) সড়কটি দীঘদিন ভাঙাচোরা। ৩ ও ১নং ওয়ার্ডের টিটিডিসি এরিয়া থেকে মহিলা কলেজ রোডের প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা। ৭নং ওয়ার্ডের দত্তরমুড়ি থেকে কলেজ সড়কের এবং শহীদ মাহবুব আলী সড়কটির বেহাল দশা। সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বিশাল খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত স্টেশন চৌমুহনী-মাগুরা লিংক সড়কের ওপর নবনির্মিত ভবনের নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় সংস্কারের এক বছরের মাথায় সেটির অবস্থাও নাজুক। 

এদিকে টিটিডিসি এরিয়া থেকে মহিলা কলেজ সড়কের এবং দক্ষিণবাজার-মাগুরা সড়কের ও স্টেশন চৌমুহনী-মাগুরা লিংক সড়কের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক। এজন্য বর্ষার সময় সামান্য বৃষ্টিতে এসব সড়কে পানি উঠে যায় ও খানাখন্দগুলোতে দীর্ঘসময় কাদাপানি জমে থাকে। এতে এসব সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়াও খানাখন্দ ভরপুর সড়কগুলোতে গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা ও রিক্সা দিয়ে চলাচলে ঝাকুঁনি সহ্য করতে হয় চালক এবং যাত্রীদের। ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমাজকর্মী সোহেল আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দত্তরমুড়ি থেকে কলেজ সড়ক ও দত্তরমুড়ি-লস্করপুর সড়ক দুটিতে সংস্কার বা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ভাঙাচোরা সড়কে পায়ে হেঁটে বা গাড়ি-রিক্সায় চড়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় এইসব এলাকার মানুষদের। দীর্ঘদিন ধরে শুনেই যাচ্ছি সড়ক দুটির উন্নয়নে টেন্ডার হচ্ছে। কিন্তু আদৌ এ পর্যন্ত সড়কগুলো সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষের বাস্তব কোন উদ্যোগ দেখিনি।

মাগুরার বাসিন্দা তাসলিমা সুলতানা মনি বলেন, দক্ষিণ মাগুরা হতে উত্তর মাগুরা সংযোগ সড়ক, দক্ষিণ বাজার ও মাগুরা থেকে টিটিডিসি এরিয়া পর্যন্ত সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এসব সড়ক দিয়ে শুধু মাগুরা দক্ষিণবাজারের বাসিন্দারা নয়, পার্শ্ববর্তী কাদিপুর ও ভূকশিমইল ইউনিয়নের কয়েক সহ¯্রাধিক লোক শহরে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অনেকটা বাধ্য হয়ে ভাঙাচোরা এসব সড়ক দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয় মানুষদের। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সড়কগুলো এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত পৌর  কর্তৃপক্ষকে।

ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্য ও দক্ষিণ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর মান্নান বলেন, উপজেলার অন্যতম বৃহত্তম দক্ষিণ বাজারে প্রতিদিন সকালে বাজার করতে হাজার হাজার লোক এখোনে আসে। ছোট বড় সহ¯্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার ও পানি নিষ্কাশনে পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকায় পানি জমে থাকে বাজার ও আশেপাশের এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতা বিক্রেতাদের।

৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ইয়াকূব-তাজুল মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, গত পৌরসভার নির্বাচনের ৪ বছর অতিক্রম করলেও মাগুরা এলাকার রাস্তা গুলোর বেহাল দশা। ভাঙাচোরা সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় একটু বৃষ্টিতে সড়কের ওপরে জমাট হয় পানি। এতে করে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই ওয়ার্ডে। পৌর মেয়র ও কর্তৃপক্ষ যদি মাগুরার ভাঙ্গাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করেন তাহলে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে মানুষ।

কুলাউড়া পৌরসভার প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম এ ব্যাপারে জানান, ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মাগুরা সড়ক ও ৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মাহবুব আলম সড়ক আরসিসি ঢালাইয়ের কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। দক্ষিণবাজার সড়কটি সংস্কারে আপাতত কোন বরাদ্দ নেই। তবে সড়কটি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই পৌরসভার বরাদ্দকৃত অন্যান্য সড়কের বাজেট থেকে সমন্বয় করে টাকা এনে এ সড়কটি সংস্কার করা হবে। বাকি সড়ক বরাদ্দ আসলে সংস্কার করা হবে পর্যায়ক্রমে।

Post a Comment

Previous Post Next Post