যত্রতত্র মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী, স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা


অনলাইন ডেস্কঃ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক, স্যানিটাইজার, গগলস কিংবা প্রোটেকটিভ গাউন মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছ। প্রত্যেকেই এই সামগ্রীগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে হঠাৎ করেই বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এসব পণ্যের। মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। ফলে বাজারের সব যায়গায় যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। যার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এসব পণ্য ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক, স্যানেটাইজার, গগলস, গাউনসহ বিভিন্ন পণ্য। এদের বেচাকেনাও বেশ ভালো। তবে এসব পণ্যের মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। বিভিন্ন পানির বোতলে বিক্রি হচ্ছে স্যানিটাইজার। এছাড়া মাস্ক এবং গাউনও খুবই নিম্ন মানের। নিম্ন আয়ের মানুষ এসব দোকান থেকে সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ইথানল-মিথানল অ্যালকোহলের সাথে ইচ্ছেমতো কাপড়ের রঙ মিশিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তৈরি করছেন মানহীন স্যানিটাইজার ও স্যাভলন। এমনকি এসব সুরক্ষাসামগ্রী তৈরিতে প্রয়োজনীয় কেমিকেলের মিশ্রণের অনুপাতও ঠিক নেই। ফলে নকল ও নিম্নমানের এসব সামগ্রী মানুষের সুরক্ষার বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের চাহিদা পুঁজি করে নিম্নমানের স্যাভলন, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রীর নামে নকল পণ্য বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, বাবুবাজারের পাইকারি ওষুধ মার্কেটের বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব সুরক্ষাসামগ্রী তৈরি করে খুচরা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। এদের নেই কোনো ল্যাব ও ক্যামিস্ট। চলতি বছরের মার্চের দিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্যাভলনের সঙ্কট দেখা গেলেও এখন যত্রতত্র মিলছে এসব পণ্য। তবে আসল নয়, নকল। ফুটপাথে, কেউবা ভ্যানে, কেউ কেউ ঝুড়িতে দেদার বিক্রি করছে এসব পণ্য।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার অভিযান চালিয়ে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার জব্দ এবং পরে তা ধ্বংস করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একটি বাসায় ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই স্পিরিট, রঙ, জেল এবং লেমন ফ্লেভার দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছিল মেসার্স কাজী ম্যানুফ্যাকচারার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু গণমাধ্যমকে জানান, ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া ভেজাল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিন্দুমাত্র উপাদান এতে ছিল না। স্পিরিট, কালার, জেল ও লেমন ফ্লেভার দিয়ে স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছিল।

তিনি আরো জানান, ‘আমরা অভিযানে দেড় লক্ষাধিক পিস হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও নকল সুরক্ষা সামগ্রী জব্দ করেছি। যার আনুমানিক বাজার মূল্য চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। এগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম এম আজিজ জানান, নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস ও মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। নকল পিপিই ও মাস্কের কারণে চিকিৎসকরা করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। নকল মাস্ক ব্যবহারে সুরক্ষার বদলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। আবার নকল স্যাভলন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ত্বকের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post