কখন-কিভাবে-কেন ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত!






তাহমীদুল আজম সানীঃ  ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আভাশ পাওয়া যাচ্ছে। এ দ্বন্দ নিয়ে আলোচনায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ অনেক আগে থেকে হলেও কাসেম সোলাইমানি হত্যা আর তার সাথে এই স্নায়ুযুদ্ধের শুরু কিন্তু তেমন আগের ঘটনা নয়। চলুন এক নজরে দেখে আসা যাক কেন এই হামলা আর কে এই কাসেম সোলাইমানি যার মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব আজ ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আভাশ পাচ্ছে। 

০৮ এপ্রিল ২০১৯ - IRGC- (Islamic Revolutionary Guard Corps) কে ট্রাম্প সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেন। আর এ সংগঠনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানী। 

২০ জুন ২০১৯ - যুক্ররাষ্ট্রের ড্রোন বিমানকে ভূপাতিত করে ইরানের সেনাবাহিনী। ইরান দাবি করে ড্রোনটি তাদের আকাশ সীমানা অতিক্রম করেছিলো আর আমেরিকা দাবি করে তারা আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিলো। 

২১ জুন ২০১৯- "প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাঠানো ড্রোনকে থামিয়ে দিয়েছি শেষ মূহুর্তে" - ট্রাম্পের টুইট বার্তা। 

২২ জুন ২০১৯- ইরান জানায়, যুক্ররাষ্ট্রের যেকোন হামলা/আক্রমনে তারা খুব দ্রুত এবং তীব্রভাবে জবাব দিবে।  

০১ জুলাই ২০১৯- ইরান তার তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম এর ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। 

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ - যুদ্ধকামী জন বল্টনকে বরখাস্থ করা হয়। 

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯- সৌদি আরামকো তেল কোম্পানিতে হামলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবী করে এটা ইরান ঘটিয়েছে, ইরান অস্বীকার করে, পরবর্তীতে ইয়েমেনের বিদ্রোহী সংগঠন এর  দ্বায়ভার স্বীকার করে। 

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯- জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে, ট্রাম্প অন্যান্য দেশকে ইরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করার জন্য আহবান করেন। 

২৭ ডিসেম্বর ২০১৯- ইরানের কিরকুকে, ইরানের সৈন্যবাহিনী হেযবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক কন্ট্রাক্টরকে হত্যা করে। 

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯-কিরকুকের প্রতিশোধ নিতে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সৈন্যঘাটিতে লক্ষ নির্ধারন করে। 

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯- বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের দুতাবাসে ইরানের সৈন্যরা হামলা করে। 

০৩ জানুয়ারি ২০২০- বাগদাদ বিমানবন্দরে এক ড্রোন হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।

০৩ জানুয়ারি ২০২০- ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেয়। 

০৪ জানুয়ারি ২০২০- ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় জানান, ইরানের ৫২ টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দিকে তারা মিসাইল তাক করে রেখেছে। 

০৫ জানুয়ারি ২০২০- ইরাকি সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সৈন্যঘাটি সরিয়ে নিতে চাপ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র জানায় ইরাক এরকম চাপ দিলে তারা ইরাকের উপরও হামলা করতে পারে। পরবর্তীতে ইরাক যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে তেমন কোন চাপ প্রয়োগ করতে পারে নি। 


০৬ জানুয়ারি ২০২০- ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি এক টুইটবার্তায় জানান, যারা ৫২ টা মিসাইল এর কথা বলছেন তাদের উচিত না ১৯৮৮ সালের বিমান দূর্ঘটনায় ২৯০ জনের মৃত্যুর কথা ভুলে যাওয়া। 

০৭ জানুয়ারি ২০২০- কাসেম সোলাইমানির জানাজায় ৫৮ জন পদদলিত হয়ে মারা যান। 

০৮ জানুয়ারি ২০২০- ইরান ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ২টি সৈন্যঘাটিতে ডজনখানেক মিসাইল হামলা করে।

০৮ জানুয়ারি ২০২০- তেহরানের একটি ভাষণে ইরানীর সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি বলেন, " গতকাল রাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে তাঁর মুখে চপেটআঘাত করেছি" 


কে এই কাসেম সোলাইমানি?

ইরানের আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধির প্রধান কারিগর জেনারেল কাসেম। তিনি ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর সবচেয়ে প্রভাবশালী কমান্ডার। সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গত অক্টোবরেও তাকে হত্যাচেষ্টা বানচাল করে দেওয়ার দাবি করেছিলো ইরান।

১৯৯৮ সাল থেকে কাসেম সোলfইমানি ইরানের কুদ'স ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে গুপ্ত হামলা চালিয়ে থাকে।তবে ১৯৮০'র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি প্রথম পরিচিতি লাভ করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের ইরান সমর্থিত সরকারকে মদদ দেয়া এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জেনারেল সোলেইমানি।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএস'এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা। জেনারেল সোলেইমানি দুই বৈরী ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিগত বছরগুলোতে ইরানের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কাসেম। গত ১৫ বছর ধরে মেজর জেনারেল কাসেম সুলাইমানি একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলী হিসেবে তৈরি হয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষমতা নির্ণয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের উপস্থিতি সুসংহত করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ অভিযান ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের মত যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করতে ইরানের 'প্রাথমিক অস্ত্র কুদ'স ফোর্স।' এসব সংগঠনকে তারা অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।

ইরানের রোভোলিউশনারি গার্ড ও তাদের অধীনস্থ কুদস ফোর্সকে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

Post a Comment

Previous Post Next Post