শাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষায় সিলেটবাসীর আতিথেয়তার অনন্য নিদর্শন


তাহমীদুল আজম সানীঃ পূণ্যভুমি সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা ছিলো গত ২৬শে অক্টোবর। যার উপলক্ষে ২৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সিলেট শহরে প্রায় দেড় লক্ষেরও অধিক মানুষের সমাগম ঘটে। যাদের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭০,৫৬২ জন। 

পরীক্ষার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এক হাতে ছাতা আরেক হাতে পরীক্ষার ফাইল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রওয়ানা দেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। সর্বমোট ৫৩ টি কেন্দ্রে, শাবিপ্রবির এ ইউনিট ও বি ইউনিট এর পরীক্ষা সমাপ্ত হয়। 

গতবছরের চাইতে এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা গোছানো, অনেকটা শৃংখল। গতবার যেখানে ২৫ টাকার সিএনজি ভাড়ার যায়গায় ৪০০ টাকাও গুনতে হয়েছিলো অনেককে। এবার আর এমন চিত্র দেখা যায় নি। পুলিশ প্রশাসন, শাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। 

সিলেট চেম্বার অফ কমার্স থেকে শাবিপ্রবি ভর্তিচ্ছুদের জন্য সকালে সরবরাহ করা হয় বিনামূল্যে ২০টি বাস, এছাড়াও সিলেট বাইকিং কমিউনিটি আর বুস্টার্স এর সদস্যবৃন্দ বাইকে করে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে যাতায়াত সেবা দিয়েছেন, যা ছিলো অনেক প্রশংসনীয়। র‍্যাবের কর্মকর্তা তাঁর নিজের গাড়িতেও পৌছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীকে তাদের পরীক্ষার কেন্দ্রে।

ভর্তি পরীক্ষায় আবাসন ব্যবস্থার অনেকটা সমাধান দিয়েছেন, খোদ শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। নিজেরা মাটিতে শুয়ে অথবা রাত্রে বাইরে কাটিয়ে নিজের রুমে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন, পরিচিত অপরিচিত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেচ্ছাসেবক হিসেবে দেখা গিয়েছে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের। ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া ছাড়াও সিএনজি-অটোরিক্সার চালকরা যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সেজন্য নিয়েছেন যথাযত ব্যবস্থা। বিভিন্ন মসজিদেও থাকার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

শাবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থী বলেন, "রাস্তায় দেখা গেছে অনেক অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীরা  ১/২ জন যাত্রী নিয়ে সিএনজি রিজার্ভ করে যাচ্ছেন। যার কারণে দেখা যায় পরিবহন সংকট আর তার জন্য চালকরা নিয়মিত ভাড়ার চাইতে ৩-৪ গুণ ভাড়া আদায়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন। তাই আমরা ঐ অর্ধেক খালী সিএনজি গুলোতে পুলিশের সহায়তায় অভিভাবকদের অনুরোধ করে, যার যার রুটে পরীক্ষার্থী তুলে দিয়েছি।"

সিলেটবাসীর পরম আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আসা পরীক্ষার্থী এক গণমাধ্যমকে জানান -
"সিলেটে এই প্রথম আসছি। কিন্তু সিলেটবাসী যে এতো আন্তরিক তা জানা ছিলনা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু সিলেটের মতো পরম মমতার চাদর কেউ দিতে পারেনি।"

এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা ছিলো দেখার মত। ব্যপারটা এমন যে, কিছু অনাকাংখিত ঘটনা বাদে সিলেটের সবাই ঐদিন রাস্তায় নেমেছিলো কাউকে না কাউকে সাহায্য করার জন্য। এ যেন সিলেটবাসীর আতিথেয়তার বরাবরের ঐতিহ্যের নিদর্শন।

Post a Comment

Previous Post Next Post