ক্যাসিনোতে নিয়মিত যেতেন পুলিশ সদস্যরাও


অনলাইন ডেস্কঃ রাজধানীর বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোতে নিয়মিত যেতেন পুলিশ সদস্যরাও। সেখানে তারা প্রায়ই খেলায় থাকতেন মত্ত। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই এসব তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। টাকা আদায়ের পাশাপাশি এমন অন্তত ডজনখানেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো খেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্তও করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো চলছিল এ নিয়ে যখন সর্বমহলে নানা প্রশ্ন ওঠে, তখনই ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ফাঁস হতে থাকে। নেপালিদের পালাতে সহায়তার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশে ও প্রশাসনে। তদন্ত শুরু হয় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। 
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে। আর পুলিশের যে-কেউ কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে ক্যাসিনোর সঙ্গেও কারও সম্পৃক্ততা পেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 
জানা যায়, রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসায়ী নেপালিদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রমনা থানার কনস্টেবল দীপঙ্কর চাকমা ক্যাসিনোতেই পড়ে থাকতেন। জুয়া খেলে দিনের পুরোটা সময় ব্যস্ততায় কাটত তার। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় সেগুনবাগিচার একটি ভবন থেকে ১৫ নেপালিকে পালাতে সহায়তাও করেন তিনি। ওই ঘটনার পর থেকে দীপঙ্করের জুয়ার নেশার তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। পুলিশের সূত্র জানায়, এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না দীপঙ্করের। ২৮ আগস্ট দীপঙ্কর ছুটিতে গিয়েছিলেন। ছুটির পর ৩ সেপ্টেম্বর তার থানায় রিপোর্ট করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ১৫ তারিখে যোগদানের কথা বলে তাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তবু যোগদান না করলে তাকে ১৭ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর আগে ১৬ আগস্ট রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি পশ্চিম বিভাগ) সহকারী কমিশনার (এসি) মজিবর রহমানের কক্ষের ড্রয়ার ভেঙে ৫ হাজার পিস ইয়াবা চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খলিফা। পরে চুরির অভিযোগে ২০ আগস্ট কনস্টেবল সোহেল রানাকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, সোহেল অনেক জুয়া খেলতেন। খেলার জন্য ক্যাসিনোতে আসা-যাওয়াও ছিল তার। আর জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই তিনি ইয়াবা চুরি করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। 
জানা যায়, কনস্টেবল সোহেল রানা ১৮ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করে আসছেন। কয়েক বছর ধরে তিনি ডিবি কার্যালয়ের উত্তরা জোনাল টিমের অধীনে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের কাকনা গ্রামে। ডিবি উত্তর বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) বদরুজ্জামান জিল্লু জানান, ইয়াবা চুরির ঘটনায় নিয়মিত মামলা হওয়ার পরই সোহেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া থেকে লাভবান হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। ক্যাসিনো বন্ধ অভিযানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এই তালিকা করা হবে। ডজনখানেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোতে নিয়মিত যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান শুরু হয়। ২১টি ক্লাব, ৪টি বার, যুবলীগ নেতার ৩টি বাসা ও ১টি দফতরে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮টি মামলা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে এসব মামলা হয়েছে। সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Post a Comment

Previous Post Next Post