আসামে ১৯ লাখ মানুষ এনআরসি থেকে বাদ


অনলাইন ডেস্ক: আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে এই তালিকা দেওয়া হয়।

প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ নাগরিক। অর্থাৎ ১৯ লাখ চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বাদপড়ারা আগামী ১২০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ পাবেন।

তালিকায় নাম আছে কিনা জানা যাবে এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে। জেলাশাসকের দপ্তরেও দেখা যাবে এনআরসি তালিকা। এনআরসির ওয়েবসাইটে গিয়ে এআরএন নম্বর টাইপ করেও দেখা যাবে নাম আছে কিনা। আবেনদনকারীদের জন্য বিশেষ টোল ফ্রি নম্বরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে (আসামের জন্য-১৫০১৭, আসামের বাইরের জন্য ১৮০০৩৪৫৩৭৬২) ।

তালিকায় নাম না থাকলেও অবশ্য এখনই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে না। এক হাজার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। যেখানে গিয়ে ১২০ দিনের মধ্যে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে তথ্য পেশ করতে পারবেন।

অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে বের করতে আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর একেই মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আসামের অবৈধ অভিবাসীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করেন। আসামের পর ভারতজুড়ে একই প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব কার্ড ইস্যুর নিয়ম চালুর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন অমিত শাহ। এ বছরের জুনে প্রকাশ করা হয় এনআরসির খসড়া তালিকা। বাদ পড়েন প্রায় ৪০ লাখ বাঙালি মুসলমান-হিন্দু।

২০১০ সালে যখন এনআরসির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই আন্দোলন শুরু হয় আসামে। বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন কয়েকজন। তালিকায় যাদের নাম আসবে না, তারা ১২০ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। আপিলেও এনআরসিতে নাম না এলে বাতিল হবে নাগরিকত্ব। এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি লোককে আসামের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

যারা নাগরিকত্ব হারাবেন, তাদের বন্দিশিবিরে নেওয়া হতে পারে। আইনি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন আসামের সংখ্যালঘু ও মুসলিম জনগোষ্ঠী।

এদিকে, নাগরিকত্ব হারানো মানুষদের বন্দিশালায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আসামের ছয়টি কারাগারকে বন্দিশালায় রূপান্তর করা হয়েছে। গোয়ালপারা, ধুবড়িগড়, জোরহাট, শিলচর, কোকড়াঝড় এবং তেজপুর জেলায় জেলগুলোকে বানানো হয়েছে বন্দিশালা। এসব এলাকায় বাঙালিদের বসবাসও বেশি। তড়িঘড়ি করে আরও ১০টি বন্দিশালা নির্মাণের তোড়জোড় চলছে এখন। সেগুলোর কাজও শুরু হয়ে গেছে। আগের ছয়টির মতোই এই বন্দিশালাগুলো প্রস্তুত হচ্ছে বারপেটা, দিমা হাসাও, কামরূপ, করিমগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, নালবাড়ি, শিবসাগর, সোনিতপুর জেলায়। শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে সে ছবিও প্রকাশিত হয়েছে।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পরই ভারত থেকে 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী'দের বের করে দেওয়ার কথা জানায়। দলটির নজর পড়ে আসামে। বিজেপি প্রচার করে, বাংলাদেশ থেকে 'অবৈধ'ভাবে বাংলাদেশের নাগরিকরা আসামে 'অনুপ্রবেশ' করেছে। ২০১৬ সালে রাজ্যটিতে বিজেপি জোট সরকার গড়ে আসাম গণপরিষদ ও বোডোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের সঙ্গে। উগ্র আসামীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে বিজেপির 'অনুপ্রবেশ তত্ত্বে' জোর হাওয়া লাগে। ১৯৮০-এর দশক থেকে বাঙালি 'অনুপ্রবেশে'র বিষয়ে সরব আসাম গণপরিষদ। এর ফলে আসামে এনআরসির সিদ্ধান্ত হয়। গত চার বছর ধরে সেখানকার বাঙালিরা নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। অথচ তাদের চৌদ্দপুরুষের বাস আসামেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post