কুলাউড়ায় ফ্রেশের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা!


কুলাউড়া প্রতিনিধি: কুলাউড়ায় ফ্রেশের একাধিক প্যাকেটজাত মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে মেয়াদ বাড়িয়ে সেগুলো আবার বাজারজাতের চেষ্টা করছেন ওই পণ্যের সেলস্ রিপ্রেজেন্টেটিভ। এমন জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়ে পৌরশহরের উত্তরবাজারে ফ্রেশ পণ্যের ডিলার সাইফুদ্দিন এন্ড ব্রাদার্সে । বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ডিলারের গুদামে বসে মেয়াদোত্তীর্ণ ফ্রেশ আটা, ময়দার প্যাকেটে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সীল মারতে থাকেন এসআর শরীফ উদ্দিন। এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী সোয়েব আহমদ ফ্রেশের এসআর শরীফ উদ্দিনকে সীল মারা অবস্থায় ধরে ফেলেন। 

খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার ভূমি সাদিউর রহিম জাদিদ ওই প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মেয়াদোত্তীর্ণ ফ্রেশের পণ্য জব্দ করেন এবং প্রতিষ্ঠানের ডিলার ও সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভকে  ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
জানা যায়, অধিক মুনাফার লোভে দির্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারজাত করে আসছিলো ফ্রেশ পণ্যের ডিলার সাইফউদ্দিন এন্ড ব্রাদারস ও কোম্পানির মার্কেটিং দায়িত্বে থাকা এস আর (সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ) শরিফ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার সকালে পৌর শহরের উত্তরবাজারস্থ সাইফউদ্দিন এন্ড ব্রাদারসের গুদামে এস আর শরিফ উদ্দিন আটা, ময়দাসহ ফ্রেশের একাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের তারিখ অবৈধভাবে তুলে নতুন মেয়াদ বসানোর কাজ করছিলো। এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী সোয়েব আহমদ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসানোর ব্যাপারে এসআর শরীফের কাছে জানতে চান। শরীফ কোন উত্তর না দিয়ে সীল ও কালি নিয়ে সটকে পড়ে। বিষয়টি চাউর হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার ভূমি সাদিউর রহিম জাদিদ কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি দল বেলা তিনটার দিকে সাইফউদ্দিন এন্ড ব্রাদারসে গিয়ে প্রায় ৬মণ আটা ও ময়দা জব্দ করে নষ্ট করে ফেলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসানোর ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে জানতে চাইলে সাইফউদ্দিন এর দায় এড়িয়ে যান এবং বলেন এব্যাপারে আমি কিছু জানিনা শুধুমাত্র মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে যে আছেন সেই জানে। পরে মার্কেটিংয়ের দায়িত্বরত এস আর শরীফ উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসানোর কথা স্বীকার করেছেন। পরে সহকারি কমিশনার ভূমি সাদিউর রহিম জাদিদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ ধারায় ফ্রেশ পণ্যের ডিলার সাইফুদ্দিন ও এস আর শরীফউদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এসময় এস আর শরীফউদ্দিনকে নির্দেশ দেন আগামী রোববারে মধ্যে ফ্রেশ পণ্যের মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা এরিয়া ম্যানেজার ও ডিভিশনাল ম্যানেজারকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য ও ফ্রেশ পণ্য কুলাউড়ায় বাজারজাতকরণে এরকম জালিয়াতি করবেননা মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। নতুবা কুলাউড়ায় এই পণ্য বাজারজাত বন্ধের জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কাছে নির্দেশ দেওয়া হবে। এসময় ডিলার সাইফউদ্দিন ও এস আর শরীফ এসময় দাবি করেন মেয়াদত্তীর্ণ পণ্য প্রতি মাসে ফেরত পাঠানো হয় কোম্পানীতে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দকৃত ফ্রেশ আটা ময়দার প্যাকেটে মেয়াদের তারিখ পাওয়া যায়নি এবং যেগুলোতে তারিখ রয়েছে সেগুলো ৩ মাস আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। 

এদিকে নামীদামি এসব কোম্পানির এমন জালিয়াতি দেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সময় উপস্থিত লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব পণ্যের পরিবেশক ও ডিলার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জোর দাবি জানান।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, উপ পুলিশ পরিদর্শক সনক চক্রবর্তীসহ পুলিশ সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুলাউড়ায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দোকন থেকে ফিরিয়ে এনে আবার নতুন তারিখ বসিয়ে আবার সেগুলো বাজারজাত করে একাধিক চক্র। পণ্যের প্যাকেটে ও  তেলের বোতলে মেয়াদের তারিখ মুছে ফেলার জন্য নেইল পলিশ রিমুভাল ব্যবহার করা হয়। পরে ওই প্যাকেটে কিংবা বোতলে নতুন ডিজিটাল সীল দিয়ে নতুন তারিখ বসিয়ে সেগুলো আবার বাজারজাত করা হয়। এরকম জালিয়াতিতে এসব কোম্পানির মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা এরিয়া সেলস ম্যানেজার (এএসএম) ও ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজাররাও (ডিএসম) জড়িত।
ফ্রেশ পণ্যের ডিলার সাইফউদ্দিন এন্ড ব্রাদার্সের মালিক সাইফউদ্দিন বলেন, আমার গুদামে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসানোর ব্যাপারে আমি দায়ী নই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ফ্রেশ পণ্যের কুলাউড়ার সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ শরীফ উদ্দিন ও কুলাউড়া রিজিওনের এরিয়া সেলস ম্যানেজার (এএসএম) ছালাম আহমদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সত্যতা নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, আগামী রোববার ফ্রেশ পণ্যের মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারদের হাজির হয়ে এমন পণ্য বাজারজাতে এমন প্রতারণা করা হবেনা মর্মে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। নির্দেশ অমান্য করলে  আগামী উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্বান্ত নিয়ে ফ্রেশ পণ্য বাজারজাত বন্ধ ও বর্জনের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতিকে জানানো হবে। তিনি আরো বলেন, এরকম জালিয়াতি বন্ধে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post