কুলাউড়া বিএনপির সাবেক সভাপতি ‘অবাঞ্চিত’, নাসেরের পদত্যাগ দাবি




শাকির আহমদ :: মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের পদত্যাগ দাবি করে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এএনএম আবেদ রাজা।

এছাড়াও বিএনপির কাউন্সিল পণ্ড করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি র সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এবং কাউন্সিল থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারকারী সভাপতি পদপ্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।

পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি হিসেবে দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর শনিবার (১৫ জুন) কুলাউড়া শহরের পালকী কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজন করে কুলাউড়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এনিয়ে বিএনপির নেতাকর্মী এবং কাউন্সিলের ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু শনিবার সকালে হঠাৎ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান সেই সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করেন।

এনিয়ে কুলাউড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ভুইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিক আহমদ জেলার নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করতে যান বেলা ১১টার দিকে। সেখানে জেলা সভাপতি ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সহসভাপতি আব্দুল মুকিত, সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিছবাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ৩টার দিকে কুলাউড়া সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা বলেন, ‘জেলার সভাপতি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে একক সিদ্ধান্তে দীর্ঘ তিনমাসের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার পর আজকের এই সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করেছেন। আমরা এবিষয়ে জেলার সভাপতির কাছে এর কারন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি।’

তিনি বলেন, ‘এধরণের অগনতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এবং জেলা সভাপতিকে সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উনার মতামত জানানোর অনুরোধ করি, এরপরও তিনি কোন ধরণের শিষ্ঠাচার দেখাননি। গত ৩০ মার্চে জেলা কর্তৃক ঘোষিত কুলাউড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর এই কাউন্সিলকে ঘিরে শত কষ্ট, মামলা-হামলা, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে পৌর ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের আবেগকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ অপমানিত করে শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাস্বাধীন কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা দিলেন জেলার সভাপতি এম. নাসের রহমান।’

জেলার সভাপতি এম. নাসের রহমানের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘উনার এরকম অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জেলার সভাপতির পদত্যাগ দাবি করছি। পাশাপাশি উনার পদত্যাগের ব্যাপারে কেন্দ্রিয় বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন করবো। প্রয়োজনে উনাকে বহিষ্কারের জন্য দাবি তোলা হবে।’

অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার বক্তব্যের সময় উপস্থিত হাজারো বিএনপির নেতাকর্মী ও কাউন্সিলের ভোটাররা এই কাউন্সিল পণ্ড করার ষড়যন্ত্রের জন্য কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদকে দায়ী করে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। উত্তেজিত নেতাকর্মীরা কামাল উদ্দিনের বাসা ঘেরাওয়ের জন্য উদ্যত হলে আবেদ রাজা নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। তাৎক্ষণিক নেতাকর্মীরা কামাল উদ্দিন জুনেদকে উদ্যেশ্য করে বিভিন্ন প্রতিবাদি শ্লোগান দিতে থাকেন।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এএনএম আবেদ রাজার সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ভুইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিক আহমদ, কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বর্তমান পৌর প্যানেল মেয়র জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য রেদওয়ান খাঁন, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য বদরুজ্জামান সজল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন খাঁন, কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী ময়নুল হোসেন বকুল, বদরুল হোসেন খাঁন, দেলোয়ার হোসেন,  সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী সুফিয়ান আহমদ (প্রিন্স), আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ আব্বাছ আলী। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক সারোয়ার আলম বেলাল, যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম ইমন, কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এম. ফয়েজ উদ্দিন, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম রাজু, সিনি. যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মুহিতসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকবৃন্দ।

অবাঞ্চিত ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ বলেন, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিলে গত ১৩ জুন। আমি ১৪ জুন প্রত্যাহারের আবেদন করি। উনারা (আহ্বায়ক কমিটি) তা গ্রহণ করেছেন, এটা সিস্টেমের মধ্যে পড়ে না। এছাড়াও কাউন্সিলের কোন দাওয়াত কিংবা কার্ড আমাকে দেয়া হয়নি। বিষয়টি আমি জেলা কমিটিকে জানিয়েছি। জেলা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেব্যাপারে আমি জানি না।

এবিষয়ে আবেদ রাজা বলেন, ‘উনি (কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ) নিজেই আহ্বায়ক কমিটির একজন নীতিনির্ধারক। কাউন্সিল ও সম্মেলন সফল করতে উনি নিজেই ভূমিকা রাখার কথা। উনাকে কে দাওয়াত দিবে? আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য এবং কাউন্সিলে প্রতিন্দ্বিতাকারী নেতা যদি নিজেই এসে একটি লিখিত আবেদন দেন সেটা কি আমাদের রাখা উচিত না?

Post a Comment

Previous Post Next Post