বসন্তের আগমনী বার্তায় তাহিরপুরের শিমুল বাগান


অনলাইন ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে দেশের একমাত্র বৃহৎ শিমুল বাগানে সদ্য ফুটে উঠা শিমুল ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তার। শীতের আমেজ কাটিয়ে কয়েকদিন পরই ঋতুরাজ বসন্তের ঘটবে। ফাগুন মাসকে রঙ্গিন করতে ফুল ফুটতে শুরু করেছে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে।

ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এপারে সীমান্ত নদী জাদুকাঁটা-মাহারামের তীরঘেষা শিমুল বাগানও যেন প্রতি বছরের ন্যায় বসন্ত উৎসবে ফাল্গনের প্রথম দিন থেকেই দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকদের আগমণের প্রহর গুনছে।

জানা যায়, ২০০২ সালে তাহিরপুরের বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন পার্শ্ববর্তী বড়দল উওর ইউনিয়নের মাণিগাঁও গ্রামে মরুময় বালু চরে প্রায় শতবিঘা পতিত জমিতে ১ হাজার শিমুল তুলোর গাছের চারা রোপন করেন। শিমুল গাছের ফাঁকে ফাঁকে বাগানের ভেতরই রোপন করেন কয়েক হাজার দেশীয় লেবুর চারা। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যু বরণ করলেও ওই দৃষ্টি নন্দন বাগানের কারণে আজও তিনি বেঁচে আছেন দেশী-বিদেশী পর্যটন ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে।

জয়নাল আবেদীনের পরিবার সূত্রে জানা যায়,  প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের ওই বাগান তৈরীতে কয়েকটি লক্ষ ও উদ্দেশ্য ছিল। এর একটি হল নদী তীরবর্তী ওই পতিত মরুময় বালু ভুমিকে খরা¯্রােতা সীমান্ত নদী জাদুকাটা মাহারামের আগ্রাসী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা। বাগানের গাছের পাতা, ডালপালা থেকে জ্বালানী কাঠ, দেশীয় তুলা, গবাধি পশুর জন্য সবুজ ঘাঁস সংগ্রহ করা। এছাড়া প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পর্যটক আকৃষ্ট করা এবং এলাকার লোকজনকে বাগান করতে উৎসাহী করা।

প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ছেলে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু তিনি যেসকল উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাগান তৈরী করেছিলেন শুধু আমি একা নই গোটা দেশবাসীও স্বীকার করবেন যে উনার প্রতিটি লক্ষ্য -উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। শুধু বসন্ত কালেই নয় বছরের প্রতিটি দিন এ বাগান দেখতে দেশ বিদেশ থেকে হাজারো লোকজন এখানে বেড়াতে আসেন এবং বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যান।

তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে গড়ো তোলা জয়নাল আবেদীনের এ শিমুল বাগান শুধু তাহিরপুরবাসীর নয় গোটা জেলা বাসীর ঐতিহ্যের ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ বাগানে চলচ্চিত্র, গান, বিজ্ঞাপন চিত্র’র শুটিং করতে বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেমন ছুটে আসছেন তেমনি, দেশ বিদেশের পর্যটক ও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও  বাগানে আসছেন।

প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের লন্ডন প্রবাসী মেয়ে দোলেনা রহমান জানান, পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতর আপাতত ওয়াশ রুম ও কয়েকটি পাকা বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাগানে পর্যটকদের নানাবিধ সুবিধার কথা মাথায় রেখে আরো বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘বাগানে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও পর্যটকদের যে কোন ধরণের সহযোগীতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেয়া আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post