জাতীয় ঐক্যমত্য গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির


অনলাইন ডেস্কঃ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সংসদ ভবনে আজ একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকান্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দু। জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কাযকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মযাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে প্রত্যক্ষ জন-সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হবো।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্স্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সূচনায় ভাষণ প্রদানের সুযোগ পাওয়ায় আমি পরম করুণাময় আল্লাহ্’র কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, নব-নির্বাচিত সংসদ-সদস্য ও দেশবাসীকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও ব্যক্তিবর্গ এবং এ কর্মযজ্ঞে সহায়তা প্রদানের জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।  একইসঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সকল ভোটার, বিশেষত মহিলা ও নবীন ভোটারদের জানান উষ্ণ অভিনন্দন।
রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত সরকার প্রথমবারের মত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ৬ষ্ঠ ও ৭ম ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’প্রণয়ন করে। এরমধ্যে ৬ষ্ঠ ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৭ম ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’র সঙ্গে এসডিজি’র প্রায় ৮২ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ প্রণয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া শতবর্ষী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির মহাসড়কে সংযুক্ত করার কার্যক্রম চলছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই এ সকল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post