এস আলম সুমন: মাস দুয়েক পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সবকটি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব হয়ে ওঠেছেন দলীয় প্রতীকের প্রার্থী হতে। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) সংসদীয় আসনেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে নিজ সংসদীয় এলাকায় গণসংযোগ ও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক প্রার্থী।
এদিকে
জোট-মহাজোটের রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে রয়েছে এই আসনের রাজনীতি। এখানে জোটের
আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং
নেতাকর্মীরা। জোটের শরীকদের সাথে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আসন
ভাগাভাগির রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে গত দেড় যুগ ধরে এই দুই দলের হেভিওয়েট
প্রার্থী ও তৃণমূল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তরা দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ছেন
এই আসনে। জোটের প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল রাজনীতিতে অনেকটাই অপরিচিত মুখ
মনোনয়ন দেয়ায় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হচ্ছেন এবং সরকার দলীয় সাংসদ থেকে
বঞ্চিত হচ্ছেন কুলাউড়ার সাধারণ ভোটাররা। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০
দলীয় জোটের সাথে গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক
দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় রাজনীতির
পাশাপাশি মৌলভীবাজার-২ আসনে এই ঘরানার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জটিল সমীকরণে
ফেলে দিয়েছে। এছাড়াও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয়
পার্টিতে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধা বিভক্তি অনেকটাই প্রকাশ্য। রাজনৈতিক দলগুলোর
দ্বিধা বিভক্তির প্রভাব অঙ্গসংগঠন ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও
বিদ্যমান। এতে করে নেতৃত্ব সংকটের মুখে কুলাউড়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
তথ্যমতে,
গত ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোটের অন্যতম
শরীক দল জামায়াতের সাথে আসন ভাগাভাগির জন্য এই আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি।
সে সময় এই আসনের মনোননয়ন দাবিদার জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি এম এম
শাহীন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
এরপর থেকেই কুলাউড়া বিএনপির দ্বিধা বিভক্তি প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। দুভাগে
বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা বিএনপি।
২০০৮
সালের নির্বাচনে সাবেক এমপি ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমদ ১/১১’র কুশীলব বা সংস্কারপন্থী হওয়ার
অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
এই আসনে ১৪ দলীয় জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৃণমূল রাজনীতিতে অনেকটাই
অপরিচিত মুখ আতাউর রহমান শামীম ও একই সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক
জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস
খানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। লাঙল প্রতীকের প্রার্থী নবাব আলী আব্বাস খান
বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং নৌকার প্রার্থী জামানত পর্যন্ত হারান। নৌকার
প্রার্থীর ধরাশায়ী ও লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর জয়ের পেছনে সুলতান মোহাম্মদ
মনসুরের প্রত্যক্ষ অবদান ছিলো। একই নির্বাচনে ১/১১’র কুশীলব বা
সংস্কারপন্থী হওয়ার অভিযোগে সাবেক সাংসদ এমএম শাহীনও বিএনপির মনোনয়ন
বঞ্চিত হয়ে আবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং পরাজিত হলেও দ্বিতীয়
সর্ব্বোচ্চ ভোট পান। ৪ দলীয় জোট থেকে মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. আবেদ রাজা
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনিও ধরাশায়ী হন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের স্থানীয় রাজনীতিতে আনকোরা (একেবারেই নতুন) মুহিবুল কাদির চৌধুরী পিন্টুকে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন খোদ নিজেই দলের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর তিনি স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে জাতীয় সংসদ কুলাউড়ার প্রতিনিধিত্ব করেন। কিছুদিন আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের সকল বিদ্রোহী স্বতন্ত্র সাংসদদের আবার দলে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সাংসদ আব্দুল মতিন আবারও দলে ঠাঁই পান।
একাদশ
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের
মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা
আব্দুল মতিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, স্বাধীনতা
চিকিৎসক পরিষদ সিলেট শাখার আহ্বায়ক ও বিএমএ সিলেট শাখার সভাপতি অধ্যাপক
ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী
নাদেল, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সাংবাদিক কামাল হাসানসহ একাধিক প্রার্থী মাঠে
কাজ করছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম
শামীম ও প্রবাসী রেজাউল হায়দার রাজু লাঙলের মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন।
অতীতের ন্যায় এবারো যদি ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির কোন
প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে স্থানীয় আওয়ামী লীগেও ভোটের
প্রার্থী নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দলীয় নেতৃত্বেও
নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের
বর্ধিত সভায় নেতৃবৃন্দরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী
লীগের নৌকার প্রার্থী দেওয়ার জোর আহ্বান জানান।
বিএনপির
নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে সাবেক সাংসদ এম এম শাহীন ও অ্যাডভোকেট আবেদ
রাজা এবং শরীকদল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) থেকে সাবেক সাংসদ নওয়াব আলী
আব্বাছ খান মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এদিকে বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। জাতীয় রাজনীতি ছাড়াও বিশেষ করে কুলাউড়ার স্থানীয় রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নির্বাচনে যায় তাহলে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের জটিল সমীকরণের হিসেব কষতে হবে। কারণ তিন ধারার রাজনীতির তিন সাবেক হেভিওয়েট সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস খান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও এম এম শাহীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এই আসনে। ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত, সাবেক ডাকসু ভিপি ও জাতীয় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সিলেট-১, ঢাকার একটি আসন, ও নিজ এলাকা মৌলভীবাজার-২ এই ৩টির মধ্যে একটিতে মনোনয়ন চাইবেন বলে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে জানান।
এতে করে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এই তিন সাংসদকে ভোট যুদ্ধের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন আদায়ের কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। জাতীয় রাজনীতি ছাড়াও বিশেষ করে কুলাউড়ার স্থানীয় রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নির্বাচনে যায় তাহলে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের জটিল সমীকরণের হিসেব কষতে হবে। কারণ তিন ধারার রাজনীতির তিন সাবেক হেভিওয়েট সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস খান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও এম এম শাহীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এই আসনে। ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত, সাবেক ডাকসু ভিপি ও জাতীয় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সিলেট-১, ঢাকার একটি আসন, ও নিজ এলাকা মৌলভীবাজার-২ এই ৩টির মধ্যে একটিতে মনোনয়ন চাইবেন বলে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে জানান।
এতে করে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এই তিন সাংসদকে ভোট যুদ্ধের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন আদায়ের কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে।
জোট-মহাজোটের আসন ভাগাভাগিতে মৌলভীবাজার-২ আসনে অতীতের ন্যায় প্রার্থী মনোনয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং নেতৃত্ব সংকট ও ভোট নিয়ে দলীয় বিভক্তি সৃষ্টি হবে বলে সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা। জাতীয় রাজনীতিতে এবারও কুলাউড়ার ভোটের রাজনীতি উপেক্ষিত থাকে কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়!
উপজেলা
বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (একাংশ) রেদওয়ান খান বলেন বিএনপি থেকে আমাদের
সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমরাও চাই বিএনপি থেকে
তাকে মনোনয়ন দেয়া হউক। তবুও দলের স্বার্থে যদি জোটের অন্য কাউকে মনোনয়ন
দেয়া হয় আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। যদি জোটের পক্ষ থেকে অন্য কাউকে মনোনয়ন
দেয়া হয় তাহলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
উপজেলা
বিএনপি'র অপরাংশের সভাপতি কামাল আহমদ জুনেদ বলেন এডভোকেট আবেদ রাজা মনোনয়ন
প্রত্যাশী। তবে দলের স্বার্থে যদি জোটের অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয় আমরা
তার পক্ষে কাজ করবো। দলীয় প্রার্থীকে যদি মনোনয়ন না দেয়া হয় তবে দলীয়
নেতকর্মীদের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে কিনা এরকম প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি
এড়িয়ে গিয়ে বিলেন দলের স্বার্থ আমাদের কাছে বড়।
উপজেলা
আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন বলেন দল থেকে আমিসহ
আরো দুজন দলীয় মনোনয়ন চাই। দল ও নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষে
কাজ করবো। গত নির্বাচনে দলীয় সিদ্বান্ত অগ্রাহ্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী
হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।