ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে মা ইলিশ


অনলাইন ডেস্কঃ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর। গত দুইদিন ধরে রায়পুরে মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ। এসব ইলিশের বেশিরভাগের পেটই ডিমে ঠাসা। এ অবস্থার মধ্যেই মৎস্য বিভাগ দাবি করছে, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি সফল হয়েছে। তবে জেলে ও মৎস্যজীবীদের এই অভিযানের সফলতা নিয়ে দ্বিমত আছে।

এতে প্রজনন মৌসুম নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভুল সিদ্ধান্তে আগামীতে ইলিশ উৎপাদন ভয়াবহ কমে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আর এতে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ‘প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করতে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার বন্ধ করতে সরকারিভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ সময় সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধসহ পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। গত রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল এই নিষেধাজ্ঞা।

সজেমিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়পুর শহরের টিসি সড়ক বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব ইলিশের পেটে এখনো পরিপক্ব ডিম রয়েছে। এতে প্রজনন নিশ্চিত করা নিয়ে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা এবারের নিষেধাজ্ঞার সময়কে সফল বলে দাবি করে বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে প্রবেশ করেছে। ভবিষ্যতে এর সুফল মিলবে। তবে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ধরা পড়া প্রায় ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও ১০ দিন বাড়িয়ে, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২২ দিন করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেত।

এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর এর ধারাবাহিকতায় ইলিশের প্রজনন সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিবছর এই কার্যক্রম হাতে নেওয়ার আগে জেলেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মাঠপর্যায়ে আরও বাস্তব ধারণা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

রায়পুর বাজারের বাজারের ব্যবসায়ী জুটন মজুমদার জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার এক দিন পর তিনি ঘাট থেকে ২৪টি ইলিশ কেনেন। বাড়িতে নিয়ে কাটা হলে ২২টির পেটে ডিম পাওয়া যায়। নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন ছিল বলে তিনি দাবি করেন।

রায়পুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এবারের অভিযান ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে এর প্রতিফলন দেখতে পাব। সারা বছরই কোনো না কোনো ইলিশের পেটে ডিম থাকে। সে কারণে সারা বছরই ইলিশ মাছে ডিম ছাড়ে। কি পরিমাণ ইলিশ এ মৌসুমে ডিম ছেড়েছে সে হিসাব আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।

চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় যেসব ইলিশ ডিম ছেড়েছে, সেগুলো যাতে বড় হওয়ার সুযোগ পায়, সে জন্য ১ নভেম্বর থেকে আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) ধরার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। 

Post a Comment

Previous Post Next Post