কুলাউড়ায় ৪ বছর থেকে শিকলবন্দী তৌফিক মিয়ার জীবন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুলাউড়া উপজেলার জয়জন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ গিয়াসনগর গ্রামের একটি জীর্ণ কুটিরে ৪ বছর থেকে শিকলবন্দী তৌফিক মিয়া (৩২)। চেয়ে থাকেন ফেল ফেল করে। পরিবারের লোকজনের দাবি তৌফিক মিয়া পাগল। কিন্তু চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য তাদের নেই। অন্যের ক্ষতি যাতে না করে এজন্যই শেকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।

জানা যায়, ইউনিয়নের দক্ষিণ গিয়াসনগর এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত ক্বারী রমিজ উদ্দিন ওরফে ‘রমিজ ক্বারী’ দু’ছেলের মধ্যে বড় তৌফিক মিয়া। ছোট ভাই মোশাহিদ আলী ওরফে আয়না মিয়া জানান, ৪ বছর আগে তাদেও পিতা মারা যাবার পর ছোট ভাই তৌফিক মিয়া পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়। নিজের সামর্থ্য ও পাশর্^বর্তীদের সাহায্যে ছোট ভাইকে অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছি। কিন্তু টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলতে পারেননি। আশপাশ মানুষের ক্ষতি করতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে শিকলবন্দি করে ঘরে রেখেছি।

জীবদ্ধশায় বিভিন্ন মসজিদ-মক্তবে চাকরি করে কোন রকমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন রমিজ ক্বারী। ৪ বছর আগে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে যান। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরেন ২য় ছেলে মোশাহিদ আলী (আয়না মিয়া)। দিনমজুরের কাজ করে মা, পাগল ভাই, বোন ও নিজের স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আয়না মিয়ার সংসার।

সরেজমিন মোশাহিদ আলী ওরফে আয়না মিয়ার বাড়িতে গেলে আধপাকা একটি ঘরের মধ্যে শুয়ে আছেন মা, বোন ও পাগল ভাই। ভাইয়ের পায়ে শিকল বাঁধা। ঠিকমত খেয়ে না খেয়ে শরীরে রোগব্যাধী জেঁকে বসেছে। পরিবারের এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে।

মোশাহিদ আলী ওরফে আয়না মিয়া আরও জানান, গত ৫ বছর থেকে নিজের স্ত্রী অসুস্থ। ডাক্তার দেখানোর পর বিভিন্ন পরীক্ষাতে জরায়ূতে সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অপারেশন করতে হবে। টাকার অভাবে আজও স্ত্রীর অপারেশন করাতে পারেননি। গত ৬ মাস আগে পুকুরপাড়ে পড়ে ছোট বোন রুলি বেগমের পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে যায়। কোন উপায়ান্তর না দেখে ১২ শতকের পৈতৃক ভিটা থেকে কিছু জমি বিক্রি করে বোনের চিকিৎসা শুরু করি। ৬মাসে পর পর ৩টি অপারেশন করলেন ডাক্তার। কিন্তু আজও আমার বোনটি সুস্থ হয়ে উঠেনি। তার পায়ের গোড়ালির ভাঙ্গা স্থানটি জোড়া লাগেনি। সর্বশেষ গত ১ মাস আগে হটাৎ করে বৃদ্ধ মা স্টোক করেন। মাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে গোটা পরিবারের সবাই অসুস্থ। এভাবে বলতে বলতে একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন আয়না মিয়া।

শেকলে বাঁধা তৌফিক মিয়ার ফেল ফেল চাহনি যেন সুস্থ হয়ে উঠার একটা করুণ আকুতি। দু’মুটো অন্ন নাকি চিকিৎসার সংস্থান করবেন আয়না মিয়া। হাতাশা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সমাজের বিত্তবানরা একটু সুনজর দিলে আস্থাকুড়ে থেকে উঠতে পারে পরিবারটি। মহৎপ্রাণ কোন সুহৃদ আয়না মিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাইলে (০১৭২৮-৯৯৬৪০১) এই মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post