মিমের অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় বসে কাঁদছেন বাবা, ওরা ‘নেশাগ্রস্ত’

মিমের অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় বসে কাঁদছেন বাবা, ওরা ‘নেশাগ্রস্ত’


অনলাইন ডেস্কঃ প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতো দিয়া খানম ওরফে মিম। কলেজের জন্য প্রস্তুত হয়ে এক সঙ্গে সকালের নাস্তা করত বাবার সঙ্গে। এরপর মহাখালীতে মেয়েকে বিআরটিসি বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। রোববারও মেয়েকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর একবার ফোন করে মেয়েকে বলেন, মা নিতে আসব? দিয়া বলেছিল, না বাবা তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। আমি নিজেই চলে আসতে পারব। আর ফেরা হল না দিয়ার। বাসচাপা পড়ল আমার আদরের দিয়া। শেষ হল আমার মেয়ের ম্যাজিস্ট্রেট বানানোর স্বপ্নও। মেয়ের অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী মিমের মৃত্যুর খবর শুনে এদিন দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। জরুরি বিভাগে মেয়ের মরদেহ দেখার পর হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের মরদেহ দেখে কয়েকবার মূর্ছাও যান তিনি। এসময় হাসপাতালে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। জানান, তিনি নিজেও একজন বাসচালক। ঢাকা-রাজশাহী পথে ৩০ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, চালকেরা অদক্ষ, নেশাগ্রস্ত। বাসমালিকেরা যাকে-তাকে স্টিয়ারিংয়ে বসাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বলেন, এখন রাজনৈতিক বা অন্য প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় একটার পর একটা বাস কোম্পানি তৈরি হচ্ছে। বাসমালিকেরা আত্মীয়-পরিজন যাকে পাচ্ছে, তাকেই স্টিয়ারিংয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন।এসব চালকের বেশির ভাগই নেশাগ্রস্ত। কেউ কেউ তো গাড়ি চলন্ত অবস্থায়ও গাঁজা খাচ্ছে। তাদের থামানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান মিমের বাবা।দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটির চালক অবশ্যই অদক্ষ দাবি করে জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে বাস চালাচ্ছেন। পরিস্থিতি বোঝেন। যেখানে উড়ালসেতুর ঢাল বড় রাস্তায় মিশেছে, আবার সামনে বাঁক আছে, আছে স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল, এসব জায়গায় দক্ষ চালকেরা ধীরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালান।

কিন্তু দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক এ রকম পরিস্থিতিতেও বেপরোয়া ছিলেন, এখানেই তার অদক্ষতার পরিচয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মেরে বাসটি থামাতে হয়েছে তাকে।রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের হোটেল রেডিসন ব্লু’র বিপরীত পাশে ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মিম।

Post a Comment

Previous Post Next Post