সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী; বাহারমর্দনে পা পড়ে না নেতাকর্মীদের!

শরীফ আহমেদ: বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাজেট পেশকারী এম সাইফুর রহমান। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা জাতীয় এই নেতার কাছে থাকতেন। কিন্তু সাইফুর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন দলের অধিকাংশ নেতার্কমীরা। আর আজ সেইসব সুবিধাভোগীদের উদ্যোগে এই প্রয়াত নেতার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে নেই কোন আয়োজন। তবে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীরা ফেসবুকে সরব থাকলেও বড় পরিসরে নেই কোন মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রয়াত এম সাইফুর রহমান রাজনৈতিক দলে থেকে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সিলেট অন্তপ্রাণ এই মহান মানুষটির স্মরণে স্থানীয়ভাবেও কোন আয়োজন করেনি কেউ। অথচ বাংলাদেশ তথা বিশ্বের দরবারসহ সিলেট বিভাগের উন্নয়নে তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষ। ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর রাজটিকা কপালে নিয়ে জন্মেছিলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দান গ্রামে। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আবদুল বাছির, মাতার নাম তালেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাইফুর রহমান সবার বড়। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। চাচা মোহাম্মদ সফির অভিভাবকত্বে তিনি বড় হন। মানুষের কল্যাণে তার হৃদয়খানি ছিল খোলা। সিলেটের অনেকেই তার আনুকুল্য নিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে। বাংলাদেশ সরকারের একজন সফল অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২ বার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেল এই প্রয়াত জাতীয় নেতার জন্ম দিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এখন আর তাঁর রাজনৈতিক দল বিএনপিও বড় পরিসরে স্মরণ করে না। তিনি যখন দায়িত্ব ছিলেন তখন তাঁর জন্মস্থান মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা যেত। তবে এই গুণী মানুষটির জন্মদিন অথবা মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধুই তাঁর পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের উদ্যোগে এম সাইফুর রহমান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ছোট পরিসরে পালন করা হয়। যেখানে প্রশ্ন থেকেই যায় তাঁরই রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে কোন স্মরণ সভার উদ্যোগ নেয়া হয় না। অথচ যখন তিনি জীবিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ সাইফুর রহমানের কাছের মানুষ হিসেবে অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন কিন্তু যারাই উপকৃত হয়েছেন তারাও সাইফুর রহমানকে স্মরন করেন না। এদিকে প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীর তারিখ আসলেই দলের পক্ষ থেকে একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ থাকে। এ নিয়ে প্রয়াত সাইফুর রহমানের নিজ জেলা মৌলভীবাজারে আলোচনা সমালোচনা চলছেই।

দলীয় সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে বিভক্তি রয়েছে। এ জন্য প্রয়াত সাইফুর রহমানের জন্মও মৃত্যুবার্ষিকীতে দলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর প্রশ্ন সাইফুর রহমান ছিলেন একজন জাতীয় নেতা তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনে কোন দলীয় গ্রুপিং থাকাটা লজ্জাজনক।

এদিকে সাইফুর রহমানের মুত্যুবার্ষিকীতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী,বড়লেখা, রাজনগর,কমলগ্ঞ্জসহ অন্যান্ন উপজেলায় নিজ দল বিএনপির পক্ষ থেকে পালনে কোন কর্মসূচি চোঁখে পড়ার মত নেই। অথচ এসব এলাকার উন্নয়নের জন্য সাইফুর রহমানের অবদান উল্লেখ যোগ্য।

একাধিক জেলা ও উপজেলার বিএনপির শীর্ষ নেতার্কমীরা কথা বলে জানা যায়, শুধুই দলের গ্রুপিংয়ের কারনে প্রয়াত এ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠান বড় পরিসরে পালন করা সম্ভব হয় না।

অপরদিকে প্রয়াত সাইফুর রহমানের খুবই কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সিলেট সিটি করর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর একবার নাসের রহমানকে সাথে নিয়ে সাইফুর রহমানের কবরের পাশে অঝরে কাঁদতে দেখা যায়।


মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মোবাইলে বলেন, সাইফুর রহমান ছিলেন একজন উচ্চমানের সফল খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ। প্রয়াত সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর মিলনায়তনে ছোট পরিসরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান মোবাইলে বলেন,এম সাইফুর রহমান দেশের উন্নয়নে কি অবদান রেখেছেন তা দেশবাসী অবগত রয়েছেন তাই যত দিন বেঁচে থাকবেন তাঁর প্রয়াত পিতাকে স্মরণ করে যাবেন।

উল্লেখ্য, এম সাইফুর রহমান শুধুমাত্র একজন দক্ষ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদই ছিলেন না তাঁকে একজন ভাল কূটনীতিক বলা যায়। তাঁর দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ এশিয়ান অস্থায়ী সদস্য পদ পায়। তখনকার সময় এটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অর্জন। ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে লেটার মার্ক সহ মেট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে সিলেট এম.সি কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন এবং ২ মাসেরও অধিককাল কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রিঅর্জন করে ঐ বছরই উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যান। পরে ১৯৫৯ সালে ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস, ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস-এর ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে ঢাকা ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান। এছাড়াও তিনি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইটালি, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কানাডা, বেলজিয়াম, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অস্টেলিয়া,কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সংলাপে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দেন। 

Post a Comment

Previous Post Next Post