নিউজ ডেস্কঃ
গেল কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের ৪র্থ দফা
বন্যা। জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওর তীরবর্তী জুড়ী, রাজনগর ও
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রায় ১২টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম নতুন করে
প্লাবিত হয়েছে। চৈত্র মাস থেকে শুরু হওয়া কয়েক দফা বন্যায় প্রায় ৬ মাস ধরে
জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছিল। কিন্তু গত ৩-৪ দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে আসা
পাহাড়ি ঢলে আবারও এই দুটি উপজেলার মানুষ ৪র্থ বারের মতো বন্যাকবলিত হয়ে
পড়েছেন।
রাজনগর
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল দাশ জানান, কয়েকদিনের
বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। এর মধ্যে রাজনগর উপজেলার
ইসলাম পুর, অন্তহরি, সোনাপুর, বেতাগঞ্জ, বিলবাড়ি, শাহবাজপুর ও গবিন্দ
পুরের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এ সব গ্রামের নিচু জায়গায় আগে থেকেই
পানি থাকলে গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ছড়ার পানি আসায় কাউয়াদিঘি
হাওরের পানি দেড় থেকে দুই ফুট বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শত শত বাড়ি ঘরে পানি
প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে কাচাপাকা রাস্থাঘাট, ফসলি জমি ও রোপা আমনের
বীজতলা। নকুল দাশ জানান পানিতে তলিয়ে গেছে অন্তহরি আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়সহ
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ওই সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষা
কার্যক্রম। একই সঙ্গে তার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদেও পানি উঠেছে বলে জানান।
এদিকে
হাকালুকি হাওর তীরবর্তী জুড়ী উপজেলায় ফের চতুর্থ বারের মতো বন্যায় দেখা
দিয়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় পানিবন্দি হয়ে
পড়েছেন। গেল কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জুড়ী
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি থামায়
তৃতীয় দফার বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও হঠাৎ করে টানা বৃষ্টিতে আবারও
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ককেও
দখল নিচ্ছে বানের পানি। জুড়ী উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক ও চৌমুহনী এলাকার
সড়কপথে পানি বেড়ে আগের মতো পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। উপজেলা শহরের বাসিন্দারা
এখন নতুন করে গেল ২ দিন থেকে অনেকটা আগের মত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বন্যাকবলিত লোকজন জানান হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে তাদের উপজেলায় বন্যার
সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তারা জানান জুড়ী উপজেলা পরিষদ, জুড়ী
চৌমুহনা, বাছিরপুর ও জুড়ী টিএন খানম কলেজ রোডে পানি উঠেছে। উপজেলার অধিকাংশ
রাস্তা ও ঘর বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। আগে দফায় দফায় বন্যা এই উপজেলার
বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হলেও বৃষ্টি
আর উজানের পাহাড়ি ঢল বন্ধ হওয়াতে তা অনেকটাই ভেসে উঠছিল। কিন্তু গেল
ক’দিনের হঠাৎ বৃষ্টিতে আবারও বন্যা। আর আগের মতো বন্যার পানিরও অবস্থা যেই
সেই।
মৌলভীবাজার
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী হঠাৎ
করে পানি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে জানান, মনু ও ধলই নদীর পানি কুশিয়ারা
হয়ে নামছে। তাই কুশিয়ারা শেরপুরে বর্তমানে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর
দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কাউয়াদিঘির পানি নামে কুশিয়ারা নদী দিয়ে।
কুশিয়ারার কাশিমপুর অংশে পানি কাটছে কম। তাই কাউয়াদিঘি হাওর থেকে পানি
নামতে পারছে না। আর ৩-৪ দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও কাউয়াদিঘিতে মিশে যাওয়া
২১টি পাহাড়ি ছড়ার পানি দ্রুত হাওরে প্রবেশ করায় হাওরের পানি বেড়ে গিয়ে হাওর
পাড়ের গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। তবে তিনি জানান কুশিয়ারার পানি টানতে শুরু
করলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
এ
ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, দফায় দফায়ই এ
জেলায় বন্যা দেখা দিচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও বন্যার্তদের সহায়তা
অব্যাহত আছে। কয়েকদফা ত্রান দেয়া হয়েছে বর্তমানে ২৪ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৪
লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা
বিতরণ করা হবে।