প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাই

অনলাইন ডেস্কঃ গত দুইদিনের টানা বৃষ্টি-আর তাতেই কার্যত থমকে গেছে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাই। যতদূর চোখ যায় চারিদিকে পানি আর পানি।
জলাবদ্ধতা হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট-বাজার-স্কুল-কলেজ-রেলস্টেশন, অফিস-আদালত থেকে সবকিছু। একেবারে চূড়ান্ত দুর্ভোগ বলতে যা বোঝায় মুম্বাই শহরের অবস্থা ঠিক তাই।  

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বুধবারও সারা দিন ধরে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং দুর্ভোগ কমার কোন সম্ভাবনা নেই। বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি)-এর পক্ষ থেকেও শহরের প্রতিটি মানুষকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছে। জরুরি প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সারা দিনে শহরে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিমি, যা সাধারণের চেয়ে অন্তত নয় গুণ বেশি।
অতি বর্ষণের ফলে সমুদ্রে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। জোয়ার ও বর্ষণের ফলে শহরর নীচু জায়গাগুলি প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের উচ্চতা ৩.২৯ মিটার থেকে ৪.৩০ মিটার পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা থাকায় হিন্দমাতা, লালবাগ, জিটিবি নগর, সিয়ন, মুলুন্দ, পার্লে, ওরলি, দাদরসহ মুম্বাইয়ের অধিকাংশ রাস্তায় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। পানি জমার কারণে কয়েক মিনিটের পথ লাগছে কয়েক ঘণ্টা। ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। পানির কারণে শহরের লাইফ লাইন রেল পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। মুম্বাইতে দৈনিক ৭০ লাখ যাত্রী চলাচল করে। কিন্তু পানির তলায় চলে গেছে বাইকুলা রেলস্টেশন। সেন্ট্রাল রেলের অধীন সমস্ত শাখায় ট্রেন প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে চলছে। ওয়েস্টার্ন রেলের বান্দ্রায় ট্রেন পরিষেবা পুরোপুরি স্তব্ধ। পানির কারণে দক্ষিণ মুম্বাই যাওয়ার ৫.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বান্দ্রা-ওরলি সি-লিঙ্কেও যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিপর্যস্ত বিমান পরিষেবাও। দৃশ্যমান কম থাকার দরুণ ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মঙ্গলবার বিকালের দিকে বিমান পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। এর আগে দিনের বেলায় প্রতিটি বিমানই প্রায় ৩৫ মিনিট দেরিতে ওঠানামা করছে। অনেক বিমানই অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

টানা বর্ষণের কারণে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত গণেশ পূজাতেও তার প্রভাব পড়েছে। অঘোষিত বন্ধ রয়েছে শহরের প্রায় অধিকাংশ স্কুলগুলিতে, বিশেষ করে জুহু, কান্দিভলি ও বোরিভলির স্কুলগুলো। মুম্বাই পৌরসভার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কেইএম হাসপাতালের ভিতরে হাঁটু সমান পানি।  

জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল'কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস। পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে ফড়নবিসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বন্যায় দুর্গতদের সহায়তার ব্যাপারে সবরকম সহায়তা করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি ও রাজনাথ।  

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৫ সালের ২৬ জুলাই’এর পর ফের এবার এত ভারী ও দীর্ঘ সময় ধরে বর্ষণ হল। ১২ বছর আগের সেই প্রবল বর্ষণে মুম্বাইতে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অনেক মানুষের মৃত্যুও হয় সে বছর। রেল, সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। বানভাসি মুম্বাইয়ে সমস্যায় পড়েন কয়েক লাখ মানুষ। সেবারের বৃষ্টি ও বন্যায় মোট ট্রেন, সিএনজি, ট্যাক্সি, বাস, ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post