বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গত জুনে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মৌলভীবাজার, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা
অংশে ৮টি ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেই ভাঙন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড
নামকাওয়াস্তে দু’ফুট উঁচু অস্থায়ী রিং বাঁধ দিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে ২ বার
রিং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদফতরে
ভারি বর্ষণের ঘোষণার পর থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ রয়েছেন উদ্বেগ
উৎকণ্ঠায়।
আকাশে কালো মেঘ জমলেই মানুষের মনে ভয় জাগে। ভারি বর্ষণ হলেই সীমান্তের ওপার থেকে আসা ঢলে ভেসে যাবে রিং বাঁধ।
চলতি
বছরের ৪ জুন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে ভোলানগর এলাকায় প্রায় ১০০
ফুট ও কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ৫০ ফুট এলাকা
জুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ৫ জুন টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া গ্রামের কদর
মিয়ার বাড়ীর কাছে প্রায় ১০০ ফুট ও আশ্রয় গ্রামে ৫০ ফুট এবং রাজনগর উপজেলা
অংশে কামারচাক ইউনিয়নের চাটিমেলাগড় ও টেংরা ইউনিয়নের উজিরপুর ও একামধু
এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে কমপক্ষে ৩৫টি
ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে।
মনু
নদীর ভাঙন কবলিত কুলাউড়া উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, আশ্রয়গ্রাম ও মিয়ারপাড়া
পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই থেকে
আড়াই ফুট উঁচু অস্থায়ী একটি রিং বাঁধ নির্মাণ করেই যেন দায় মুক্তি নিয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় লোকজন এটাকে গলার ফাঁস হিসেবে অবিহিত করেছেন। কেননা
ইতোমধ্যে দু’দফা এবং রিং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
মিয়ারপাড়া
এলাকায় সৃষ্ট ভাঙনে সর্বস্ব হারা হয়েছেন ফয়জুন বেগম (৬০)। অন্যের বাড়িতে
এখন তিনি আশ্রিত থাকেন। ভাঙনের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত কদর মিয়া, আসুক মিয়া,
মখলিছ মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, সুফি মিয়া, ছুরুক মিয়া, সুজন মিয়া, নিজুম মিয়া,
শাহাব উদ্দিন. ছনর মিয়া, জয়নু মিয়া, আমির উদ্দিন জানান, সর্বশেষ গত ১৩
আগস্ট রিং বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। গ্রামের
সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ স্বেচ্ছাশ্রমে রিং
বাঁধের উপর বালুভর্তি বস্তা বিছিয়ে কাঁদা মাটি দিয়ে কোনমতে রিংবাঁধ রক্ষা
করা হয়।
এলাকাবাসী
জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই তারা আতঙ্কে থাকেন। এই বুঝি ভারী বর্ষণ শুরু হবে।
আর সীমান্তের ওপার থেকে আসা ঢলে সবকিছু একাকার করে দেবে।
টিলাগাঁও
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক জানান, মনু নদীর সৃষ্ট ভাঙনে শুধু
আশপাশ এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তাঘাট লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকায় শুধু রিং বাঁধ দিলে হবে দ্রুত ভাঙন এলাকা মেরামত করতে
হবে। সেই সাথে ভাঙন এলাকায় ব্লক স্থাপন করলে স্থায়ী সমাধান হবে। নতুবা
প্রতিবছরই কোন না কোন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হবে।
কুলাউড়া
উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌ. মো. গোলাম রাব্বি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর
সাথে কথা হয়েছে। বৃষ্টিপাত থামলেই তারা কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
এব্যাপারে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান,
মনু নদীর ভাঙন এলাকাসহ ৩৯ পয়েন্টে ব্লক স্থাপনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা
হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলেই কাজ শুরু হবে। তবে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের
উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই, কেননা মনু নদীর উজানে ভারতে ত্রিপুরায় ভারী
বর্ষণের আশঙ্কা খুব একটা নেই।
