অনলাইন ডেস্কঃ
কথা দিয়েছিলেন। আর তাই হাজারো বাধা পেরিয়ে পাকিস্তানে বাবা-মায়ের কোলে
মুন্নিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বজরঙ্গি ভাইজান। ২০১৫ সালে ওই দৃশ্য দেখে হল
ভর্তি প্রতিটি মানুষের চোখে পানি এসেছিল। ওটা ছিল রিল লাইফ, অর্থাৎ সিনেমার
পর্দায়। কিন্তু দুই বছর পর যে তা বাস্তবেও রূপ নেবে তা বোধহয় কেউ কল্পনা
করতে পারেনি। কিন্তু সেটাই ঘটল কলকাতায়। সমস্ত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে
বাংলাদেশি নারীকে নিজের দেশে ফিরিয়ে দিল এক পুলিশ ভাই।
কয়েক
মাস আগে বাংলাদেশের খুলনা থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন জাহিদা
বেগম। সঙ্গে এসেছিলেন তারই পরিচিত এক নারী। দুইজনেই কলকাতার ন্যাশনাল
মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের বহিঃবিভাগে দেখাচ্ছিলেন। এর মধ্যে চিকিৎসা
শেষে নারী সঙ্গীটি দেশে ফিরে গেলেও, চিকিৎসকের পরামর্শে আরও কয়েক দিন
কলকাততেই থেকে যান জাহিদা।
স্বামী
সামান্য ভ্যানচালক হওয়ায় সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন ছিল না। ফলে হোটেলে
না থেকে হাসপাতাল চত্বরেই রাত কাটাচ্ছিলেন জাহিদা। ২১ জুলাই আচমকাই মাথায়
আকাশ ভেঙে পড়ে জাহিদার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেন তার সঙ্গে থাকা ছোট হাত
ব্যাগটি চুরি গেছে। ওই ব্যাগটিতেই ছিল জাহিদার পাসপোর্ট, ভিসা, সামান্য
কিছু রুপি ও চিকিৎসা সম্পর্কিত কাগজপত্র।
স্বভাবতই
বিদেশে গিয়ে অথৈ পানিতে পড়ে যান জাহিদা। স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে এরপর
বউবাজার থানায় ছোটেন অভিযোগ জানাতে। থানায় সে সময় কর্মরত ছিলেন উপ-পরিদর্শক
(এসআই) ডোডান ট্যামলং, উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামিরুল ইসলাম এবং নারী
হোমগার্ড পম্পা ভট্টাচার্য। এসময় পুরো ঘটনাটি জানান জাহিদা।
তবে
জাহিদার এই ঘটনা নেহাতই আর পাঁচটা ছিনতাইয়ের ঘটনার মতো থানার খাতায়
লিপিবদ্ধ হয়ে থাকেনি। নিজের খরচেই জাহিদাকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেন
ট্যামলং, তাকে সহায়তা করেন অন্য পুলিশ কর্মীরাও। প্রথমে জাহিদার পাসপোর্ট
সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সংগ্রহণের জন্য থাকার এক কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়
হরিদাসপুর ইমিগ্রেশন চেক পোস্টে। সেখানে জাহিদার ভারতে প্রবেশের ডেট অব
এন্ট্রি, পাসপোর্ট নাম্বার, ভিসা নম্বর সব সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি জাহিদার
নতুন ট্রাভেল ও এক্সিট অনুমতি চেয়ে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনেও
যান পুলিশের কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে নিরাপত্তার কারণে বড়বাজারের বরি
মসজিদের মুসাফিরখানায় রাখা হয় জাহিদাকে।
দেশে
ফেরার সমস্ত নথিপত্র হাতে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন জাহিদা। আর এর পুরো
খরচটাই বহন করেন ওই উপ-পরিদর্শক (এসআই)। মূলত ট্যামলং এর উদ্যোগেই দেশে
ফিরে যাওয়ার পথ সুগম হয় জাহিদার।
জাহিদা
জানান, আমার পাসপোর্ট হারিয়ে যাওযায় আমি সে সময় প্রায়-পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি প্রথমে লালবাজারে যাই। সেখান থেকে বলা হলো হাসপাতালটি যেহেতু বউবাজার
থানার অধীন তাই সেখানেই যেতে হবে। এরপর আমি বউবাজার থানায় অভিযোগ জানাতে
যাই।
অন্যদিকে
ট্যামলং জানান, আমার কাছে ওই নারী অভিযোগ জানাতে আসে এবং উনার কথা শুনেই
মনে হল তিনি বাংলাদেশি। থানার এক ডিউটি অফিসার আমায় বলেন, ওই নারীর ব্যাগ
হারিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, আমার থানার অন্য এক কর্মকর্তাকে দিয়ে জাহিদার
পাসপোর্টের বিবরণ জানতে বউবাজার থানার এক কর্মকর্তাকে বেনাপোলে পাঠাই।
জাহিদার পাসপোর্ট সম্পর্কিত সব তথ্যের বিবরণ সংগ্রহ করা হয়।
জাহিদার
সমস্ত নথি সংগ্রহের পর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার টিকিটও কেটে দেন ট্যামলং।
বৃহস্পতিবার সকালেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে কলকাতা ছাড়েন জাহিদা। আর দিদিকে
বাসে উঠিয়ে দিতে বাস টার্মিনাসে ট্যামলং নিজেও হাজির ছিলেন।
কলকাতা ছাড়ার সময় জাহিদা জানান, দেশে ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। ভাইদের জন্য আমি দোয়া করবো।
তবে
এখানেই শেষ নয়, ভাই-বোনের সম্পর্কে যাতে ছেদ না পড়ে সেজন্য জাহিদাকে একটি
মোবাইল ফোনও উপহার দেন ট্যামলং। ভাইয়ের তরফে এই আতিথেয়তা পেয়ে অভিভূত বোন
জাহিদাও।
তিনি
জানান, ভাই যদি কখনও বাংলাদেশে যান তবে নিজের হাতে রান্না করা পদ্মার ইলিশ
মাছ খাওয়াবেন। হাসতে হাসতে মাথা নাড়িয়ে তাতে সম্মতি জানালেন ট্যামলংও।
সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা জাহিদার কাছে বউবাজার থানার এসআই ট্যামলং সত্যিই বজরঙ্গি ভাইজান।
