একসঙ্গে পরীক্ষা : মা-পুত্র পাশ, ফেল করলেন বাবা

অনলাইন ডেস্কঃ শিক্ষার কোনো বয়স হয় না। প্রবাদ বাক্যকে সত্যি প্রমাণ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাঁসখালির পাটিকাবাড়ি গ্রামের মণ্ডল পরিবার। এবার ছেলের সঙ্গে মা-বাবাও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। ছেলে ও মা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন বাবা। তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। আবার পরীক্ষায় বসবেন বলে জানিয়েছেন।
পাটিকাবাড়ি গ্রামের পেশায় ভাগচাষি বলরাম মণ্ডল, তার স্ত্রী কল্যাণীদেবী ও ছেলে বিপ্লব একসঙ্গে ধানতলা থানার হাজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ছেলে ২৫৩ ও মা ২২৮ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন।
শৈশবে অর্থাভাবে মাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি বছর ৪৩ এর বলরামবাবু। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাদের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ছেলে বিপ্লবকে পড়াশুনা করার জন্য নিয়মিত উৎসাহ দিতেন। এরই মাঝে বলরামবাবু ২০১৪সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। স্বামীকে দেখে কল্যাণীদেবীরও মাধ্যমিক দেয়ার ইচ্ছা জাগে। তিনি বিয়ের আগে দেনুই-আড়বাঁধি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন। স্বামীর মাধ্যমিক পাশের পরের বছর রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন কল্যাণীদেবী। ওই একই বছরে পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছেলে বিপ্লবও মাধ্যমিক পাশ করেন।
২০১৫সালে বাবা, মা ও ছেলে তিনজনেই রানাঘাট-২ ব্লকের হাজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হন। পাটিকাবাড়ি থেকে হাজরাপুরের দূরত্ব ৬ কিমি। তিনজনেই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতেন। রাজ্য সরকারের দেয়া সবুজ সাথি সাইকেলও পেয়েছেন এই তিন পড়ুয়া। বলরামবাবু মাঠের চাষাবাদের কাজ সামলে প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রীকেও সাইকেলের পিছনে বসিয়ে স্কুলে যেতেন। কল্যাণীদেবীও ভোরবেলা উঠে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে স্বামী ও ছেলের সঙ্গে স্কুলমুখী হতেন। প্রথম প্রথম একটু লজ্জা লজ্জা লাগলেও, পরে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল তাদের।
পরীক্ষার আগে এক মাসের জন্য স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই টিউশন নিয়েছিলেন। যদিও আর্থিক অনটনের কারণে সারা বছর টিউশন নেয়ার সামর্থ ছিল না। তবে ছেলের টিউশন ছিল। ছেলে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়ে এসে বাবা মাকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। অসমবয়সি এই তিন পড়ুয়া নতুন উদ্যমে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’‌জনের ফল ভালো হলেও, বাড়ির কর্তার রেজাল্ট আশানুরূপ হল না। মনমরা বলরামবাবু। তবে তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেন, রেজাল্ট রিভিউ করাব। তাতে পাশ না হলে, আবার আমি পরীক্ষায় বসব। তবে ছেলে ও স্ত্রীর ফলাফলে খুশি হয়েছি। আমিও পাশ করলে বাড়িতে উৎসব হতো। কল্যাণীদেবী বলেন, ছেলেই বরাবর আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। আরও পড়তে চাই। বগুলা কলেজে ভর্তি হব।
বাবা মাকে সহপাঠী পেয়ে ছেলেও আনন্দে ছিলেন। তবে বাবা পাশ না করায় মন খারাপ বিপ্লবের। তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য বাবা মা আমার সহপাঠী। বাবা মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আপাতত কলা বিভাগে কলেজে ভর্তি হব। ভবিষ্যতে চাকরি করে পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে চাই।

Post a Comment

Previous Post Next Post