উত্তরপত্র হয়ে উঠল প্রেমপত্র! ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

উত্তরপত্র হয়ে উঠল প্রেমপত্র! ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
অনলাইন ডেস্কঃ কেউ লিখেছেন “তু শায়ের হ্যায়, ম্যায় তেরি শায়েরি..”, কোন শিক্ষার্থী লিখেছেন “ও কখনও আমার কথা শুনে চলে না, ও শুধু নিজের কথায় চলে..”। আর যারা কোন রোমান্টিক গান বা শায়েরি সেই মুহুর্তে মনে করতে পারেনি তারা আজেবাজে ও কুরুচিকরপূর্ণ কিছু শব্দ দিয়ে নিজের উত্তর পত্র ভরিয়েছেন। অভিনব এই ঘটনা ঘটিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট ল’কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা ভেবেছিল এভাবেই বুঝি নিজেদের যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করে শিক্ষকের মন আদায় করতে পারবেন। কিন্তু ফল হল উল্টা। আজেবাজে শব্দ দিয়ে উত্তরপত্র ভরাটের অভিযোগে দুই নারী শিক্ষার্থীসহ ১০ শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।     

জানা যায়, গত বছরের শেষের দিকে ওই ল’কলেজের ১৮১ জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় বসে এবং ৭২ জন শিক্ষার্থী তাদের চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষায় বসে। ফল বেরোয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। তাতে দেখা যায় দ্বিতীয় সেমিস্টারে পাশ করেছে ২৫ জন শিক্ষার্থী আর চতুর্থ সেমিস্টারে মাত্র একজন পাশ করেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ছিল শূণ্য। উত্তরপত্র খতিয়ে দেখতেই দেখা যায় ১০ জন শিক্ষার্থী তাদের উত্তরপত্রে পরীক্ষা সম্পর্কিত কোন বিষয় উল্লেখ না করে সেখানে গান, শায়েরি, কুরুচিকর শব্দ দিয়ে উত্তরপত্র ভরিয়েছে। পরীক্ষায় এই নম্বর পেয়ে স্বভাবতই উত্তেজিত হয়ে ওঠে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস এবং কলেজের কার্যকরী অধ্যক্ষ দুর্জয় কুমার দেব’এর ঘরে ভাঙচুর চালায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি।

এই কলেজটি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেই গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য গোপাল চন্দ্র মিশ্র জানান ‘শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখে একটা জিনিস পরিস্কার যে পরীক্ষার উত্তর সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না। পরীক্ষা হলের মধ্যে সময় নষ্ট করে উত্তরপত্রে তারা আজেবাজে কথা এমনকি কুরুচিকর শব্দও লিখেছে। শিক্ষার্থীদের জানা উচিত যে কোনটা বৈধ আর কোন অবৈধ। সুপরিকল্পিতভাবে একটা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুড় চালানোটা অবৈধ’।

স্কুলের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রতারণার ঘটনা, উত্তরপত্রে ছবি এঁকে দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কলেজের শিক্ষার্থীদের এভাবে উত্তরের বদলে প্রেমপত্র, গানের লাইন লিখে আসার ঘটনাটি বিশ্বাসই করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  
গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাস জানান ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পরই অভিযুক্ত দশ শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হচ্ছে না। তাদের দ্বিতীয়বারের জন্য একটি সুযোগ দেওয়া হবে। দুই বছর পর ওই দশ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে নতুন করে পুরোনো পাঠ্যক্রমে ভর্তি হতে হবে’। নিয়ম অনুযায়ী আগামী দুই বছর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা কোন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগুলার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না।
কলেজ সূত্রে খবর, জানুয়ারি মাসে ফল প্রকাশের পরই পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে একটি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক কমিটি। উত্তরপত্রে এই সব লেখার অভিযোগে ১০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ডেকে পাঠানো হলে আটজন শিক্ষার্থী তাদের দোষ স্বীকার করে কিন্তু দুইজন এখনও উপস্থিত হয় নি। এরপর গত মঙ্গলবারই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post