তিস্তা চুক্তি করতে রাজি মোদি, নিমরাজি মমতা

তিস্তা চুক্তি করতে রাজি মোদি, নিমরাজি মমতা
অনলাইন ডেস্কঃ ক’দিন পরই দিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি করতে চান তিনি। মোদি এককথায় রাজি, কিন্তু নিমরাজি মমতা। তাই মমতাকে চাপে রেখে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার ছক কষছেন মোদি। শেখ হাসিনা সরকার যখন মৌলবাদী, আইএস, বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি, মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক-বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত ব্যবস্থা নিয়ে চলেছে, ঠিক এমন একটা মুহূর্তেই তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রকৃত সময়। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ভারত সফর রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ আমলা প্রত্যেকেই মনে করছেন, হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তিসহ আরও অনেকগুলি চুক্তি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। উভয় দেশেই সাধারণ মানুষের মনে এই বিষয়ে আশা-আকাঙ্খা জন্ম নিয়েছে। সব মিলিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে উভয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরই। কিন্তু তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত করতে হলে নরেন্দ্র মোদিকে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম- এই দু’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করতে হবে। আগে যা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এখন অবশ্য আবারো নতুন করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু উভয় দেশের জনগণের মধ্যে এই চুক্তি নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন ঠিক অতীতের মতোই নিজের আপত্তি তুলে ধরেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ যাত্রায় মমতার আপত্তিকে সম্মতিতে বদলে ফেলার মতো অস্ত্র রয়েছে মোদির হাতে। আর সেই অস্ত্র হলো, নারদ স্টিং অপারেশনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবি আই-এর তদন্ত। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের সাত সাংসদ-সহ একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের বিরুদ্ধে ঘুস-কাণ্ডে অভিযোগে সিবি আই-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেত্ত্বৃাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। অন্যদিকে, ভারতের শাসক দল বিজেপির ‘মাদার’ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পশ্চিমবঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল ও সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নারদ-অস্ত্রকে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি এবং আরএসএস। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ছিটমহল বিনিময় নিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সায় দেন তিনি। গত ২৩ মার্চ একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য যা করার করবো, তবে বাংলার স্বার্থ বাঁচিয়ে।’ তাঁর আশঙ্কা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে বাদ দিয়েই শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করে ফেলবেন। এমনটা হলে তিনি যে তা কিছুতেই মানবেন না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। বলা বাহুল্য, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে চাষাবাদের একটা বড় অংশ তিস্তার জলের ওপরে নির্ভরশীল। সেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার উদ্যোগ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে শেষ মুহূর্তে ঢাকা সফর বাতিল করেন মমতা। সেসময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে এগিয়েছে মনমোহন সরকার। এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে সরব মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘যেখানে রাজ্যের স্বার্থ, সেখানে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কিন্তু শুনছি ২৫ মে বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ আমি এখনও কিচ্ছু জানি না।’ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস এখন কোণঠাসা হওয়ার কারণে প্রতিদিনই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার মমতার ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে। হাসিনা দিল্লিতে আসার সময়ই বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত করতে চাইছেন মোদি। এদিকে নানা মহলে যতই সংশয় থাক না কেন, নারদ নিয়ে কোনোরকম ঢিলেমির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সারদা নিয়ে সিবি আই তদন্ত মাঝখানে গতি হারানোয় নানা প্রশ্ন উঠছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর নারদ তদন্তের ভারও এখন সিবি আই-এর হাতে। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতাদের স্পষ্ট কথা, সিবি আই নিঃসন্দেহে দ্রুত তদন্তের কাজ শেষ করবে। তাঁদের সাফাই, সিবি আই-এর কাজে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে না। তাছাড়া এই মামলা নিয়ে প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত কড়া মনোভাব নেওয়ায় সিবি আই কড়া হাতে তদন্ত সামলাবে এবং অভিযুক্তদের ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ‘ভারতীয় এবং বাঙালি হিসেবে আমি মনে করি, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি শুধুমাত্র ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও মধুর করবে তাই নয়, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের যে অংশটি তিস্তা অববাহিকার মধ্যে পড়ে, সেই বিস্তর্ঢু অংশের গরিব মানুষ যদি জলের অভাবে চাষবাস করতে না পারে, তাহলে সেখানকার অসহায় গরিব মানুষ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে আসবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post