অনলাইন ডেস্কঃ
জঙ্গিদের কাবু করার জন্য গ্রেনেড ছুঁড়ে সেনাসদস্যরা, সেই গ্রেনেড লুফে
নিয়ে উল্টো সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে জঙ্গিরা। এথেকে বুঝায় যায়
আতিয়া মহলের ভেতরে থাকা জঙ্গিরা ওয়েল ট্রেইনড (ভালোভাবে প্রশিক্ষিত)।
এমনটি
জানিয়েছেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খফরুল আহসান। সিলেট দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি
এলাকার আতিয়ামহলে জঙ্গিবিরোধী চলমান অভিযান নিয়ে রোববার বিকেলে
সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে এমনটি জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল
আহসান।
জঙ্গিদের
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ধারণা দিতে তিনি বলেন, নানা স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন
করে জঙ্গিরা বাড়ি দুটিতে অভিযান চালানো কঠিন করে তুলেছে। তারা আইইডি ফিক্স
করেছে, তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, জঙ্গি যারা আছে তারা ভালো জ্ঞান রাখে কীভাবে
দুর্গম করে তুলতে হয়। সুতরাং অপারেশন শেষ করাতে ভালো ঝুঁকি আছে, এজন্য সময়
লাগছে।
জঙ্গি
আস্তানা সন্দেহে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এই বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ।
শনিবার সকাল থেকে অভিযানে নামে সেনাবাহিনীর কমান্ড দল। দুইদিন অভিযান শেষে
রোববার বিকেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, ঘরের ভেতরে দু'জন
জঙ্গি মারা গেছে। আরো একাধিক জঙ্গি সেখানে রয়েছে। ফলে অভিযান অব্যাহত
থাকবে।
ভবনের
ভেতরের জঙ্গিদের কাছে প্রচুর বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে জানিয়ে
ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, জঙ্গিরা পুরো ভবনের বিভিন্ন স্থানে আইইডি
(ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) পেতে রেখেছে। তাদের কাছে প্রচুর
বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া হালকা অস্ত্রও রয়েছে। সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে ওই
বাসা থেকে গুলিও ছোঁড়া হচ্ছিলো।
এই
অভিযান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করে এই সেনা কর্মকর্তা
বলেন, প্যারা কমান্ড দলের সদস্যরা অত্যন্ত কৌশলে ও দক্ষতার সাথে এই
অভিযানটি পরিচালনা করছে।
কবে অভিযান শেষ হবে এবং ভেতরে মোট কতজন জঙ্গি রয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই ব্যক্তির মালিকানাধীন পাঁচ তলা ও চার তলা বাড়ি দুটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ।
শুক্রবারও ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন।
প্রথম
দিনে উদ্ধার করা হয় বাড়িটির ভেতরে আটকে পড়া ৭৮ জনকে। তার মধ্যেই সন্ধ্যায়
কাছের এলাকায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন।
সেনা
সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল বলেন, “দুজন নিহত হয়েছে বলে আমরা
নিশ্চিত দেখতে পেয়েছি। একজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল।
“দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়।”
যে
বাসাটি জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তাতে কাউছার আলী ও
মর্জিনা বেগম নামে এক দম্পতি তিন মাস আগে ওঠেন বলে জানান বাড়ির মালিক
উস্তার আলী। শুক্রবার অভিযানের সময় তাদের সাড়াও দেখা যাচ্ছিল।
এদিকে,
রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন
কামাল জানিয়েছেন, আতিয়া মহলের ভেতরে ‘বড়’ কোনো জঙ্গি থাকতে পারে।
তিনি
বলেন, রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার
ব্যবহার করে হোল তৈরি করে… সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি।
তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়।
এক
বছর আগে গুলশান হামলার পর এই প্রথম কোনো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে
সেনাবাহিনী। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন-১ এর অধিনায়ক
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল হাসান।
প্রথমে
সোয়াট অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’।
কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটে বলে সেনা কর্মকর্তারা জানান।
সেনাবাহিনী অভিযানের নাম বদলে দেয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।