নিউজ ডেস্কঃ ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া, এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সুখবর আসছে। বংলাদেশের কর্মীদের জন্য সুযোগের দুয়ার খুলছে। এমন খবরে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকরা নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন।
৫ লাখ ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’ দেবে ইতালি
শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় নতুন করে ৫ লাখ ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’ ইস্যু করবে ইতালি। ৩০ জুন দেশটির মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈধ অভিবাসন চ্যানেল সম্প্রসারণের কৌশলের অংশ হিসেবে ইতালি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জন্য নতুন কর্ম ভিসা ইস্যু করা হবে।
আগামী বছর মোট ১৬৪,৮৫০ জনকে অনুমতি দেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জন নতুন কর্ম ভিসায় ইতালি যেতে পারবেন। প্রায় তিন বছর আগে ডানপন্থি জোটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ভিসা নীতি সহজ করে আসছেন। বিপুল বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে এটি তার দ্বিতীয় পদক্ষেপ। সরকার এরই মধ্যে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীর জন্য পারমিট ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বড় সুখবর
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে এসে অস্ট্রেলিয়া সরকার অভিবাসন নীতিতে আনছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই নতুন নিয়মগুলো প্রবাসীদের জীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
১. ভিসা ফি ও বেতনের সীমা বৃদ্ধি: নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ছাত্র ভিসার ফি কিছুটা বাড়ছে। তবে নূন্যতম বেতন (টিএসএমআইটি) বাড়ছে। এই পরিবর্তন নিয়োগদাতাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ালেও বিদেশি কর্মীদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক সুরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২. রাজ্যভিত্তিক মনোনয়নে সাময়িক স্থগিতাদেশ: অধিকাংশ রাজ্য, ইতিমধ্যেই নতুন মনোনয়ন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে। তবে জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নতুন কোটা ঘোষণার পর আবার চালু হবে মনোনয়ন কার্যক্রম।
৩. আঞ্চলিক এলাকায় ‘ডেজিগনেটেড এরিয়া মাইগ্রেশন এগ্রিমেন্ট’ বা ডামা ভিসার আওতায় কাজের সুযোগ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। আবেদনকারীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা করা হয়েছে ৫৫ বছর। ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে শর্তে রয়েছে নমনীয়তা। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ডামা ভিসার আবেদন গত এক বছরে বেড়েছে বহু পরিমাণ। ডামা ভিসা এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, অনেকের জন্য স্থায়ী বসবাসের সম্ভাবনাময় পথ হয়ে উঠছে।
৪. নতুন স্থায়ী ভিসা: অস্ট্রেলিয়া চালু করতে যাচ্ছে একটি নতুন ধরনের স্থায়ী ভিসা, যা মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিভাবান ব্যক্তিদের জন্য। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া প্রথম এই ভিসার জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালু করেছে।
৫. ৪৮২ ভিসায় রিফিউজাল বেড়েছে ৪১%: চলতি বছর ৪৮২ টেম্পোরারি স্কিলড ভিসায় আবেদন বাতিলের হার বেড়েছে ৪১ শতাংশ। বাতিলের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে— মনোনীত পেশাটি বাস্তবিক চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ নয়। যেমন, ছোট কোনো ক্যাফে থেকে ফুলটাইম শেফের জন্য ভিসা আবেদন করলে, অনেক সময় তা যথার্থ বিবেচিত হচ্ছে না।
৬. অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শঅভিজ্ঞ অভিবাসন পরামর্শকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালেও, সঠিক প্রস্তুতি ও সচেতন পরিকল্পনা থাকলে তা রূপ নিতে পারে সম্ভাবনায়।
তাঁরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় যেতে আগ্রহীরা এখনই স্কিল অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করুন। ইংরেজি পরীক্ষায় ভালো স্কোরের দিকে মনোযোগ দিনঅভিজ্ঞ পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিকল্পনা সাজানসব মিলিয়ে বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পথ আগের তুলনায় কিছুটা কঠিন হচ্ছে। তবে যারা বাস্তবতা বুঝে, নিয়ম জানে ও নিজেকে প্রস্তুত করে এগোবেন তাদের জন্য এই পরিবর্তন হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
এক বছর বন্ধ থাকার পর ফের খুলছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। প্রথম দফায় শিগগির ৭৯২৬ জন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। দেশটিতে সফররত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেখানকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ১৫ মে এক ফেসবুক বার্তায় এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি গত দুদিন আগে মালয়েশিয়ায় এসেছি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এখানে কিছু অগ্রবর্তী সাধিত হয়েছে, সেটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
কর্মী নিবে জাপান
এদিকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাপানি কোম্পানিগুলো। চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী। গত সোমবার সাইতামা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্ভাবনাময় সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বাণিজ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত। চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কোজি মোচিদার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে জাপানি কোম্পানিগুলোতে দক্ষ বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে সেসব দেশে শ্রমিক পাঠানোর অচলাবস্থা দূর করতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এশিয়ার দক্ষিণ কোরিা সিঙ্গাপুর বা তাইওয়ানের মতো দেশেও বিদেশী শ্রমিকের চাহিদা প্রচুর। এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কম খরচে কর্মী পাঠাতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।