অসমের করিমগঞ্জে একাদশ ভাষা শহীদকে স্মরণ



সুদীপ দাস, করিমগঞ্জ, অসমঃ একাদশ ভাষা শহিদকে শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার জনতার ঢল নেমেছিল ভারতের অসম রাজ্যের করিমগঞ্জে । আগ্রাসনের হাত থেকে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে প্রত্যেক বাঙালিকে, শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে অভিমত জানিয়েছেন একাধিক বক্তা ।

শুক্রবার বরাক উপত‍্যকা বঙ্গ সাহিত‍্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের উদ‍্যোগে শহিদ তর্পণ অনুষ্ঠানে  করিমগঞ্জের শম্ভু সাগর উদ্যানে জাতীয় শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান বহু ব্যক্তি ও সংগঠনের কর্মকর্তারা । অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও সামাজিক-সাংস্ক‍ৃতিক সংস্থার কর্মকর্তা । 

বাংলাভাষা পুরো মাত্রায় চালু করতে আইনগত ভাবে কোন বাধা নেই । পরিবর্তন করতে হবে আমাদের মানসিকতার । নিজের মাতৃভাষায় জেলাশাষককে স্মারকপত্র প্রদান করা হলে জেলাশাসক সেই স্মারকপত্রকে অবজ্ঞা করতে পারবেন না বা অতীতে কোন জেলাশাসক এরকম কিছু করেননি তাই আগে নিজেদের বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে । করিমগঞ্জে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে এভাবেই বলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক ড. সুখেন্দু শেখর দত্ত ।



বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের করিমগঞ্জ শহর সমিতির সভাপতি সৌমিত্র পালের পৌরহিত্য সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে করিমগঞ্জ পুরসভার

প্রাক্তন সহ সভাপতি সুখেন্দু বিকাশ পাল বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য যারা প্রাণ বলিদান দিয়েছেন তাদের কথা আমরা রাখতে পারিনি । অসমের বুকে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার অধিকার রক্ষা জন্য বরাক বঙ্গের আন্দোলনে সামিল হয়ে আন্দোলনকে সার্থক করে তোলার জন্য শপথ গ্রহণ করার আহ্বান রাখেন তিনি।

করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক নির্মল সরকার বলেন, অসম বা বরাক উপত্যকা নয়, ভারতবর্ষের বেশ কিছু জায়গাতে একই ভাবে অন্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছিলো । বলেন, বাঙালির একাগ্রতা যদি আনতে হয় তাহলে সর্বত্রই আমাদের বাঙালি হিসাবে দেখতে হবে ।

বঙ্গ সাহিত্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সুবীর রায় চৌধুরী বলেন শুধু নির্দিষ্ট দিনে ভাষার চেতনায় জাগলে চলবে না সারা বছর ভাষার প্রচার প্রসার করতে হবে ।

তিনি বলেন অন্য ভাষা গোষ্ঠী নানা কৌশলে আমাদের ভাষায় আঘাত আনছে তা থেকে রেহাই পেতে হলে  আমাদের ভাষা সংস্কৃতির চর্চা বেশি করে করতে হবে । তিনি বলেন, একাদশ শহিদের আত্মঘাতা বরাক উপত্যকার বাহিরে জোর প্রচার করতে হবে । এখনো অনেক জায়গায় রক্ত রাঙানো উনিশ ও একুশে বার্তা পৌঁছায়নি ।

শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক ও মাল‍্যদান করে বরাকবঙ্গের পক্ষে বিনোদলাল চক্রবর্তী, সৌমিত্র পাল,  নীলজকান্তি দাস, সুখেন্দু বিকাশ পাল, রণধীর রায়, নন্দ কিশোর বণিক, ঝুমা দাস, সুখেন্দু শেখর দত্ত, সুবীর রায়চৌধুরী, নির্মল বণিক, নিশিকান্ত ভট্টাচার্য, সুবীরবরণ রায়, রণধীর রায়, সুলেখা দত্তচৌধুরী, রাজন সাহা সর্দার, অরূপ রায় সহ অনেকে।

এছাড়া শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন করিমগঞ্জের পুরপতি রবীন্দ্রচন্দ্র দেব এবং উপপুরপতি সুখেন্দু দাস, চারণিক-র মনোজিৎ চৌধুরী, গীতবিতান সংগীত বিদ‍্যালয়ের বিষ্ণুপদ নাগ, রেডক্রস সোসাইটির নিখিলরঞ্জন দাস, জেলা ক্রীড়া সংস্থার অমলেশ চ‍ৌধুরী, সুদীপ চক্রবর্তী,অশোক দত্ত ,অসীম ভট্টাচার্য প্রমুখ । এছাড়া সর্বভারতীয় সিলেটি ফোরাম, মাতৃসংঘ,বাংলা সাহিত‍্য সভা, বিরজা সুন্দরী বালিকা বিদ‍্যালয়,নগেন্দ্রনাথ মধ‍্যবঙ্গ বিদ‍্যালয়, করিমগঞ্জ সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল অব সায়েন্স সহ অন‍্যান‍্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শহিদ বেদিতে মাল‍্যদান করে শ্রদ্ধা জানান।

প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালের এইদিনে ভারতের অসম রাজ্যের শিলচরের এগারো জন বাঙালি মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য তথা বাংলায় কথা বলার জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এবং প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সালাম, রফিক, সফিক, বরকত ও জব্বার। সেই ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পরে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন আরো একটি আন্দোলন হয়েছিল এবং সে আন্দোলেনে একজন নারীসহ এগারোজন বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন অসমের বরাক উপত্যকার শিলচরে।

১৯৬১ সালে ভারতের অসম প্রাদেশিক সরকার বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার বাঙালি অধ্যুষিত শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির বাংলাভাষাভাষীদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধু অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা দিলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঙালিরা এবং পরে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। ১৯ মে সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘটের সময় শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে রেলপথ অবরোধের সময় আসাম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ন বাংলাভাষা আন্দোলন কারীদের প্রতি নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে এবং ১১জন ভাষাসৈনিক ঘটানাস্থলে শহীদ হন এবং আহত হন অর্ধশতাধিক ।

Post a Comment

Previous Post Next Post