আজ সৈয়দ মহসীন আলীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী



স্টাফ রিপোর্টার; সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী, আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন তিনি।

এদিকে ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মৌলভীবাজারে মহসীন আলী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

অসাম্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করে সৈয়দ মহসীন আলী হয়ে উঠেছিলেন গণ মানুষের নেতা । আমরা তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি ছিলেন মৌলভীবাজার পৌরসভায় পর পর ৩ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার নামে মৌলভীবাজার শহরে একটি সড়ক প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই ।

সৈয়দ মহসীন আলীর মেজো মেয়ে সানজিদা শারমিন বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে নিজের জমি বিক্রি করে দেওয়ার দৃষ্টান্ত তিনি দেখিয়েছিলেন। একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।

তিনি আরো ও বলেন, মহসীন আলী ছিলেন একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ। গান আর কবিতা তাঁর পছন্দের শীর্ষে ছিল। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সকালে প্রয়াত মহসীন আলীর কবরে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। পরে বাসায় মিলাদ ও এতিমদের খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও দেয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ মহসীন আলীর পিতার নাম সৈয়দ আশরাফ আলী। তিনি একজন সুনামধণ্য ব্যবসায়ী ছিলেন।

সৈয়দ মহসীন আলীর মাতার নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তাদের বিশাল বাড়ি। আলীপুরের সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইদের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। সৈয়দ মহসীন আলীর শিক্ষা জীবন শুর” হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্টজেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেমব্রিজ ও সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন।

ছাত্র জীবনেই সৈয়দ মহসীন আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে ২৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সম্মুখসমরে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে আরও সক্রিয় হয়ে পড়েন। রাজনীতির বাইরে সৈয়দ মহসীন আলী একজন সামাজিক সংগঠক ও সাংবাদিক ছিলেন।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মহসিন আলী মৌলভীবাজার মহকুমা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সাল থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভায় পরপর তিন বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।এরপর সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় ২০০৮ সালে মৌলভীবাজার- রাজনগর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহের” সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন।

দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়।

মানুষের জন্য কাজ করাই ছিল আব্বার জীবনের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। এই দানবীর ব্যক্তি তাই মরেও অমর হয়ে আছেন সকলের হৃদয়ে । 

Post a Comment

Previous Post Next Post